মনের শান্তি পাওয়ার উপায় কী?

মনের শান্তি পাওয়ার উপায় কী?

আপনি কি কখনো গভীর রাতে আকাশের তারা দেখে ভেবেছেন, “কীভাবে মনকে শান্ত করব?” আমাদের সনাতন ধর্মের মূল শিক্ষাগুলির মধ্যে একটি হলো মনকে শান্ত রেখে জীবনের গভীরতায় প্রবেশ করা। উপনিষদ আমাদের সেই পথ দেখায়। উপনিষদের জ্ঞান শুধু তত্ত্ব নয়, এটি জীবনবোধ। চলুন, দেখি কীভাবে উপনিষদ আমাদের মনের শান্তি পেতে সাহায্য করে।

 উপনিষদে মনের স্বরূপ

উপনিষদ বলে, মন আমাদের আত্মার দর্পণ। যদি মন বিশুদ্ধ হয়, তবে আত্মার প্রতিফলন স্পষ্ট হয়। যেমন, মুণ্ডক উপনিষদে বলা হয়েছে:
“সত্যমেব জয়তে নানৃতম্”
সত্য এবং পবিত্র চিন্তা মনের অস্থিরতাকে দূর করে। মিথ্যা এবং অহংকার আমাদের ভেতরে দহন তৈরি করে। তাই সত্য ও নির্মলতার পথে থাকাই মনের শান্তির প্রথম ধাপ।

 অহংকার ত্যাগ করুন: তৈত্তিরীয় উপনিষদে শিক্ষা

তৈত্তিরীয় উপনিষদে বলা হয়েছে,
“মাতৃদেবো ভব, পিতৃদেবো ভব।”
অহংকার ত্যাগ করে আপনি যদি আপনার গুরু, মা-বাবা এবং ঈশ্বরকে স্মরণ করেন, তবে মন সহজেই প্রশান্তি পায়। যেসব মানুষ সবসময় নিজেদের বড় করে দেখেন, তারা চিরকাল অস্থিরতায় ভোগেন। মনকে শান্ত করতে হলে আমাদের অহংকারকে দূরে সরিয়ে রাখতেই হবে।

 ধ্যান ও যোগের গুরুত্ব

কাঠ উপনিষদে ধ্যানের বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এটি বলে:
“ধ্যানম্ সার্বভৌম ধ্যানম্।”
অর্থাৎ, ধ্যানের মাধ্যমে মনকে একাগ্র করতে হয়। ধ্যান করলে আপনার চিত্ত শান্ত হবে এবং সব সমস্যার সমাধান খুঁজে পাবেন। মহর্ষি পতঞ্জলির যোগ সূত্রেও এই ধ্যানের প্রসঙ্গ এসেছে। তিনি বলেছেন, যোগ শুধু শরীর নয়, মন এবং আত্মার জন্যও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

 ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি: গীতার পরামর্শ

ভগবদ গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছেন:
“তস্যাহং সুলভঃ পার্থ নিত্যযোগতঃ।”
যে ব্যক্তি ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি রাখে, তার মনে শান্তি স্থাপন হয়। যখন আমরা বিশ্বাস করি যে আমাদের জীবন ঈশ্বরের হাতে পরিচালিত, তখন মন অস্থিরতা হারায়।
একবার ভাবুন হনুমানজির কথা। সীতাকে উদ্ধারের জন্য রাবণের দরবারে গিয়ে তিনি ধৈর্য হারাননি। তার মন সর্বদা ভগবান রামের প্রতি ভক্তিতে পূর্ণ ছিল। সেই ভক্তিই তাকে শক্তি দিয়েছিল।

 প্রকৃতির সাথে সংযোগ

ঋগ্বেদের একটি মন্ত্রে বলা হয়েছে:
“পৃথিবী মা ধাত্রী।”
পৃথিবী আমাদের মা এবং আমরা তার সন্তান। আপনি কি কখনো প্রকৃতির মাঝে সময় কাটিয়ে দেখেছেন? নদীর ধারে বসে থাকা, গাছের ছায়ায় সময় কাটানো, কিংবা সূর্যোদয় দেখার আনন্দ কি মনকে প্রশান্ত করে না? প্রকৃতির সাথে সংযোগ স্থাপন করাও মনের শান্তির একটি সহজ উপায়।

 ক্ষমা এবং ত্যাগের শিক্ষা

ইশোপনিষদে বলা হয়েছে:
“ত্যক্তেন ভুঞ্জীথাঃ।”
অর্থাৎ, ত্যাগ করলেই আপনি প্রকৃত আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন। রামের অযোধ্যা ত্যাগের গল্পে আমরা এই শিক্ষাই পাই। রামচন্দ্রের জীবনে এত কষ্ট ছিল, কিন্তু তিনি সব কিছু গ্রহণ করলেন ধৈর্য এবং শান্ত মনে। আমাদেরও ক্ষমা করতে এবং ত্যাগ করতে শিখতে হবে।

 অহিংসা এবং প্রেমের পথ

উপনিষদের শিক্ষা হলো অহিংসা এবং প্রেম। প্রেমের মাধ্যমে মনের অশান্তি দূর করা সম্ভব। একজন মানুষ যখন নিজের শত্রুকেও ক্ষমা করতে শেখে, তখন তার মন সত্যিকারের শান্তি খুঁজে পায়। এই শিক্ষা আমরা মহাত্মা গান্ধীজির জীবন থেকেও পাই।

সনাতনী সমাপ্তি: শান্তি মন্ত্র

মনের শান্তি নিয়ে আলোচনার শেষে উপনিষদের শান্তি মন্ত্র স্মরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই মন্ত্রটি উচ্চারণ করলে মনে এক অদ্ভুত প্রশান্তি অনুভব হয়:

“ওঁ পূর্ণমদঃ পূর্ণমিদং পূর্ণাৎ পূর্ণমুদচ্যতে।
পূর্ণস্য পূর্ণমাদায় পূর্ণমেবাবশিষ্যতে।
ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ।”

সত্যিই, উপনিষদের শিক্ষা আমাদের জীবনে শান্তি এবং সমৃদ্ধি এনে দিতে পারে। তাই, আসুন উপনিষদের জ্ঞান গ্রহণ করি এবং মনের গভীরে শান্তি লাভ করি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top