“আপঃ ঐবঃ সর্বং বিশ্বং ভুবনং অভিবেশয়ন্তি।”
— ঋগ্বেদে জলকে এমনই গৌরবপূর্ণ এবং সর্বজনীন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। জল শুধু আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজন নয়, এটি প্রকৃতির প্রাণশক্তি। উপনিষদ, যা আমাদের সনাতন ধর্মের জ্ঞান ও আত্ম উপলব্ধির আধার, জল সংরক্ষণের গুরুত্ব বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়।
উপনিষদে জলের মহিমা
উপনিষদে জলের প্রতি শ্রদ্ধার গুরুত্ব বোঝাতে বলা হয়েছে, “আপঃ পবন্তু মম অমৃতস্য পুত্রঃ।” এখানে জলকে পবিত্র এবং জীবনের উৎস হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। আমাদের দেহের রসায়নে, প্রার্থনার উপাচারে এবং আত্মার পরিশুদ্ধিতে জল অপরিহার্য। এর মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে সৃষ্টির গোপন রসায়ন।
সনাতন ধর্মে জল সংরক্ষণের উদাহরণ
সনাতন ধর্মে প্রাচীন কালে জল সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার বহু উদাহরণ পাওয়া যায়। রাজা ভগীরথ গঙ্গা নদীকে মর্ত্যে নিয়ে আসার জন্য তপস্যা করেছিলেন। এই কাহিনি শুধু গঙ্গার আবাহন নয়, প্রকৃতপক্ষে এটি আমাদের শিক্ষা দেয় কীভাবে জলকে পরম শ্রদ্ধা ও যত্নসহকারে রক্ষা করা উচিত।
পঞ্চভূতের অন্যতম ‘আপঃ’ (জল) জীবনধারণের মূল ভিত্তি। “জল” শব্দটি আমাদের সংস্কৃতিতে শুধু এক উপাদান নয়; এটি জীবনের চক্রের সাথে জড়িত। প্রাচীন ভারতে কুণ্ড, বাওলি এবং সরোবর তৈরি করে জল সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হত, যা আজও আমাদের ঐতিহ্যের পরিচয় বহন করে।
উপনিষদ অনুযায়ী জল সংরক্ষণের দায়িত্ব
উপনিষদে বলা হয়েছে, “পরিস্কার জলই পরম ব্রহ্ম।” আমাদের জীবনধারণের জন্য যে জলের প্রয়োজন, তা আমরা প্রকৃতির থেকে ধার নিয়েছি। তাই এই জলের প্রতিটি বিন্দু রক্ষা করা আমাদের ধর্মীয় কর্তব্য। জল সংরক্ষণ মানে কেবল পরিবেশকে রক্ষা করা নয়; এটি প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের একটি রূপ।
আধুনিক যুগে জল সংরক্ষণে সনাতন চেতনা
আজকের সময়ে, যখন আমরা জল সংকটের মুখোমুখি, তখন সনাতন ধর্মের জ্ঞান আমাদের নতুন দিশা দেখাতে পারে।
১. আমাদের ঘরে জল অপচয় বন্ধ করা উচিত।
২. বৃষ্টির জল সংরক্ষণে প্রাচীন পদ্ধতিগুলি আবার চালু করা দরকার।
৩. নদী এবং পুকুরকে দূষণ থেকে মুক্ত রাখা আমাদের কর্তব্য।
যখন আমরা আমাদের প্রতিদিনের জীবনে এই নিয়মগুলি অনুসরণ করি, তখন তা ঈশ্বরের প্রতি আমাদের ভক্তি প্রকাশের একটি অংশ হয়ে ওঠে।
কেমন হবে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি?
জল সংরক্ষণ শুধু প্রয়োজন নয়, এটি আমাদের আত্মার দায়িত্ব। জলের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হলে আমাদের ছোট ছোট পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। প্রকৃতি ও ঈশ্বরকে একসাথে দেখে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের প্রতিটি কাজ যেন জলের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে, তবেই আমরা প্রকৃতপক্ষে সনাতন ধর্মের আদর্শ রক্ষা করতে পারব।
“হরিঃ ওম তৎসৎ”।