সনাতন ধর্মে প্রকৃতির প্রতি মানুষের দায়িত্বকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয়েছে। আমাদের বেদ, উপনিষদ এবং অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ প্রকৃতি ও পরিবেশকে ঈশ্বরের একটি রূপ হিসেবে দেখেছে। এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, প্রকৃতি শুধু আমাদের ব্যবহার করার জন্য নয়, বরং এটি রক্ষা ও সুরক্ষিত করার জন্যও। উপনিষদে উল্লেখিত গভীর তত্ত্ব আমাদের শেখায় যে মানুষ ও প্রকৃতি পরস্পরের উপর নির্ভরশীল। তাই প্রকৃতির প্রতি আমাদের আচরণকে ধার্মিকতার অংশ হিসেবে গ্রহণ করা উচিত।
উপনিষদের নির্দেশনা
উপনিষদ বলে, “ঈশাবাস্যমিদং সর্বং”—এই জগৎ ঈশ্বরের দ্বারা পরিব্যাপ্ত। এর অর্থ হলো, এই পৃথিবীর প্রতিটি কণা ঈশ্বরের সৃষ্টি এবং সেই সৃষ্টির প্রতি আমাদের যত্ন নেওয়া উচিত। “যৎ কিঞ্চ জগত্যাং জগত্”—যা কিছু জগতে আছে, তা আমাদের ঋণ। এটি আমাদের শেখায় যে আমরা প্রকৃতির অংশ, এবং প্রকৃতির সুরক্ষার মাধ্যমে আমরা ঈশ্বরের প্রতি আমাদের দায়িত্ব পালন করি।
প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত ধর্মীয় উদাহরণ
১. প্রহ্লাদের গল্প: প্রহ্লাদ ছোটবেলা থেকেই ভগবান নারায়ণের উপাসক ছিলেন। তিনি প্রকৃতির প্রতিটি উপাদানে ভগবানের উপস্থিতি অনুভব করতেন। হোলিকা যখন তাঁকে আগুনে নিক্ষেপ করতে চেয়েছিল, প্রকৃতি নিজেই তাঁকে রক্ষা করেছিল। এই ঘটনা আমাদের শেখায় যে প্রকৃতিকে সম্মান করলে প্রকৃতি আমাদের সুরক্ষিত রাখে।
২. যজ্ঞের গুরুত্ব: বৈদিক যুগে যজ্ঞের মাধ্যমে প্রকৃতির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো হতো। যজ্ঞের ধোঁয়া বায়ুমণ্ডলকে বিশুদ্ধ করত এবং এটি প্রকৃতির প্রতি মানুষের দায়িত্ব পালনের একটি প্রথা ছিল।
৩. শ্রীকৃষ্ণের গোবর্ধন পর্বত উত্তোলন: ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যখন গোবর্ধন পর্বত উত্তোলন করেন, তখন তিনি বার্তা দিয়েছিলেন যে প্রকৃতি এবং তার উপাদানগুলিকে সম্মান করা উচিত। গোবর্ধন পূজার মাধ্যমে তিনি মানুষকে প্রকৃতির প্রতিটি অংশকে রক্ষা করার গুরুত্ব বুঝিয়েছিলেন।
আমাদের বর্তমান দায়িত্ব
আজকের দিনে পরিবেশ দূষণ, অরণ্যনিধন এবং জলবায়ু পরিবর্তন প্রকৃতির উপর আমাদের অবহেলার প্রমাণ। উপনিষদে যা শিক্ষা দেওয়া হয়েছে, তা যদি আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বাস্তবায়িত করি, তবে এই সমস্যাগুলো সহজেই সমাধান হতে পারে। যেমন, বৃক্ষরোপণ, জল সংরক্ষণ, এবং প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানোর মতো ছোট উদ্যোগগুলো প্রকৃতির প্রতি আমাদের দায়িত্বের একটি অংশ।
উপসংহার
সনাতন ধর্মে প্রকৃতির প্রতি দায়িত্ব পালনকে কেবল একটি নৈতিক নির্দেশনা নয়, বরং এটি ঈশ্বরের প্রতি ভক্তির একটি রূপ হিসেবে দেখা হয়েছে। উপনিষদে প্রদত্ত এই জ্ঞান আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে প্রকৃতি এবং আমরা এক অখণ্ড সত্তার অংশ। প্রকৃতির যত্ন নেওয়া মানে নিজের ধর্ম ও সংস্কৃতিকে সম্মান জানানো। সুতরাং, আসুন আমরা প্রকৃতির প্রতি আমাদের কর্তব্য পালন করি এবং এই পৃথিবীকে আরও সুন্দর করে তুলি।
ঔঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ।