আমাদের আধুনিক জীবনের প্রতিদিনের কাহিনীটা কী? সকালে উঠে আয়নার সামনে দাঁড়ানো, নিজের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলা, ইনস্টাগ্রামে স্ক্রল করে ‘পারফেক্ট’ জীবন দেখে নিজেকে প্রশ্ন করা, ‘আমার জীবনে কেন সবকিছু এতই অগোছালো?’ আর এই ভাবনাগুলোই আস্তে আস্তে আমাদের আত্মসম্মানবোধকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়। কিন্তু জানো কি? হাজার হাজার বছর আগে রচিত উপনিষদগুলোতেও এই সমস্যার সমাধান লুকিয়ে আছে!
চলো, দেখি উপনিষদ অনুযায়ী কেন আত্মসম্মানবোধ বাড়ানো এতটা জরুরি এবং কীভাবে তা আমাদের জীবন বদলে দিতে পারে।
১. নিজেকে জানো (আত্মানং বিদ্ধি)
উপনিষদের বিখ্যাত বাণী ‘আত্মানং বিদ্ধি’, নিজেকে জানো। যতক্ষণ না তুমি নিজেকে সত্যিকার অর্থে চিনবে, ততক্ষণ অন্যদের কথাই তোমার জীবনের নিয়ন্ত্রক হবে। আত্মসম্মানবোধ বাড়াতে প্রথমেই নিজের ভেতরের ভালো-মন্দ সব দিককে গ্রহণ করো।
২. বাহ্যিক সাফল্য নয়, অভ্যন্তরীণ সুখ গুরুত্বপূর্ণ
উপনিষদে বলা হয়েছে, ‘সত্যম্ শিবম্ সুন্দরম্’, যা সত্য, তাই সুন্দর। বাহ্যিক সাফল্য কখনও আত্মাকে পূর্ণ করতে পারে না। তাই আত্মসম্মানবোধ বাড়াতে বাহ্যিক চমক ছেড়ে অন্তরের শান্তি খুঁজে পাওয়া জরুরি।
৩. অন্যের চোখে নয়, নিজের চোখে নিজেকে দেখো
আমরা প্রায়ই অন্যদের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করে নিজেদের বিচার করি। কিন্তু উপনিষদে বলা হয়েছে, ‘ব্রহ্মাস্মি’, আমি ব্রহ্ম, আমি পূর্ণ। নিজের জন্য নিজেকে ভালোবাসতে শেখো।
৪. স্থিতি ও ধৈর্য্যের শক্তি
জীবনে ঝড় আসবেই। উপনিষদ শেখায়, ‘যো ধীরঃ, সঃ সুখী’, যে ধৈর্য্যশীল, সেই সুখী। আত্মসম্মানবোধ বাড়াতে ধৈর্য্যকে জীবনের মূল মন্ত্র বানাও।
৫. অন্যদের দয়া করো, তবে নিজেকেও দয়া করো
‘দয়া, করুণা, প্রেম’, উপনিষদের মূল শিক্ষা। তবে অন্যদের জন্য দয়ালু হতে গিয়ে নিজের প্রতি অবিচার কোরো না। আত্মসম্মানবোধ বাড়াতে নিজেকেও ভালোবাসো।
৬. কর্মের ওপর বিশ্বাস রাখো
‘কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন’, গীতার এই বাণীও উপনিষদের শিক্ষার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। ফলের চিন্তা না করে নিজের কাজটাই মন দিয়ে করো, আত্মসম্মানবোধ আপনা থেকেই বাড়বে।
৭. আত্মা অমর, দুঃখ ক্ষণস্থায়ী
‘ন জায়তে ম্রিয়তে বা কদাচিত্’, আত্মা কখনও জন্মায় না, কখনও মরে না। জীবনের ছোটখাটো সমস্যা আত্মাকে স্পর্শ করতে পারে না, এই ভাবনা আত্মসম্মানবোধ বাড়ায়।
৮. ভয় ত্যাগ করো
‘অভয়ম্’, ভয়ের সম্পূর্ণ অনুপস্থিতি। উপনিষদ শেখায়, ভয় ত্যাগ করলেই জীবনে সত্যিকারের সম্মান আসে। আত্মসম্মানবোধ বাড়াতে সাহসিকতার প্রয়োজন।
৯. নিজেকে দেবত্বে প্রতিষ্ঠিত করো
‘তত্ত্বমসি’, তুমি-ই সেই। অর্থাৎ, তুমি-ই সর্বোচ্চ শক্তির অংশ। নিজেকে ছোট ভাবো না, কারণ তোমার মধ্যে অসীম শক্তি রয়েছে।
সমাপ্তি: তুমি কি নিজেকে চিনতে প্রস্তুত?
এখন তোমার পালা! উপনিষদের এই শিক্ষাগুলো কি তোমার জীবনে প্রয়োগ করবে? নাকি আবারও আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের দিকে তাচ্ছিল্যের চোখে তাকাবে? নিচের কমেন্টে তোমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করো, আর মনে রেখো, তুমি-ই তোমার জীবনের নায়িকা!