স্কুল-কলেজের ফ্রি পিরিয়ড, টিউশনের ব্রেক টাইম, বা শুক্রবার রাতে ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা। ফুচকা, মোমো, কফি, নতুন গেমের স্কিন, ইন্সটা অ্যাড থেকে দেখা ওই “অসাধারণ” গ্যাজেট, পকেটে টাকা পড়ে তো সেগুলো একরকম চুম্বকের মতো উধাও হয়ে যায়।
কিছুদিনের মধ্যেই সিচুয়েশনটা এমন দাঁড়ায়:
বিকাশ ব্যালেন্স: ২১ টাকা।
মন: ভাঙা।
সমস্যা: মাসের বাকি ১৫ দিন কিভাবে চালাবো?
এই সমস্যাটা আসলে কেন এমন হয়?
কারণ আমাদের মাথার ভেতর একটা ‘চাওয়ার মেশিন’ বসানো আছে। গেমিং স্কিন হোক বা নতুন স্নিকার্স , যা চোখে পড়ে, সেটা পেতে ইচ্ছা হয়। এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়, “এটা পেলে আমি হ্যাপি হবো!”
কিন্তু উপনিষদ বলছে:
“যথার্থ সত্যের জ্ঞান না থাকলে, মানুষ বাহ্যিক বস্তু নিয়েই সন্তুষ্টির আশা করে।”
(Kaṭha Upanishad, 2.1.2)
মানে, ভেতরের শূন্যতা পূরণ করতে গিয়ে বাইরের জিনিসের পেছনে দৌড়াচ্ছিস। আর এই লুপটা কখনো শেষ হয় না। টাকা যেভাবেই কামা, খরচ হতেই থাকবে।
উপনিষদ কী বলে সমাধানে?
তো, এবার আসল খেলায় আসা যাক , ৭টি উপায় যেভাবে খরচে নিয়ন্ত্রণ আনতে পারবি, উপনিষদের গাইডলাইন মেনে:
১. “চাওয়া” আর “প্রয়োজন” আলাদা কর।
উপনিষদে আছে,
“অবিনশ্বর আনন্দের জন্য জাগতিক চাওয়া ত্যাগ কর।”
(Mundaka Upanishad 1.2.12)
তোর খরচের লিস্ট দেখ। সত্যি কি ওই জিনিসগুলো দরকার ছিল? নাকি শুধু ফিলিংস বেইসড ইমপালস? লিস্ট করার ৫ মিনিটই তোর চোখ খুলে দেবে।
২. “স্মৃতি বিরতি” প্র্যাকটিস কর।
কোনো কিছু কিনতে ইচ্ছে হলেই , এক মিনিট থাম। চোখ বন্ধ কর। নিজেকে জিজ্ঞাসা কর:
“আমি কি এই মুহূর্তে এটা ছাড়া চলতে পারবো?”
উপনিষদ বলে:
“যে নিজেকে জানে, সে বাহ্যিক চাহিদায় আটকে থাকে না।”
(Chandogya Upanishad 7.25.2)
৩. নিজের মানসিক স্টেট বুঝে খরচ কর।
বোরড, স্ট্রেসড বা ব্রোকেন হলে খরচের লেভেল বাড়ে। একে বলে “ইমোশনাল স্পেন্ডিং”।
উপনিষদের ভাষায়,
“বিভ্রান্ত চিত্ত কখনো শান্ত থাকে না।”
(Bhagavad Gita, যেটা উপনিষদের ফিলোসফিক্যাল চাইল্ড)
এ অবস্থায় কেনাকাটা বন্ধ। আগে মাথা ঠান্ডা কর।
৪. নিজের সীমা জান।
উপনিষদ বলে,
“আপনার সীমা জানুন, অতিরিক্তে নিজেকে জড়াবেন না।”
(Isha Upanishad 1)
পকেটে ১০০০ টাকা থাকলে, নিজের জন্য সর্বোচ্চ ২০০ টাকার ‘ফান খরচ’ রাখ। বাকিটা ভবিষ্যতের জন্য।
৫. সত্যিকারের আনন্দ কোথায় সেটা খুঁজ।
খরচ করলে সাময়িক মজা পাস। কিন্তু কিছুদিন পরেই মন আবার খালি খালি লাগে, তাই না?
উপনিষদ শেখায়:
“আনন্দ নিজের মধ্যেই। বাইরের জিনিস শুধু তার ছায়া।”
(Taittiriya Upanishad 2.7.1)
এমন কিছু কর যা টাকার উপর নির্ভর করে না , নতুন স্কিল শেখা, প্রকৃতির সাথে সময় কাটানো, ধ্যান।
৬. অর্থের প্রতি ‘অসক্তি’ তৈরি কর।
টাকার দাস হইস না। টাকাকে তোর টুল বানাও।
উপনিষদ বলছে:
“অসক্তি আসল স্বাধীনতার মূল।”
(Bhagavad Gita 2.47)
যখনই পেমেন্ট আসে, আগে বাঁচাও, পরে খরচ কর।
৭. আত্ম-অনুসন্ধানী হ।
সবচেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট, উপনিষদ বারবার বলছে:
“কে আমি?” বুঝতে পারলে, বাহ্যিক জিনিসের মোহ কমে যায়।
(Brihadaranyaka Upanishad 4.4.12)
রেগুলার একটু সময় দে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে। টাকা, খরচ, গ্যাজেট, সবই তখন গেমের মতো লাগবে।
শেষে একটা স্পিরিচুয়াল হ্যাক: “মন্থন মুহূর্ত” প্র্যাকটিস কর।
প্রতিদিন ২ মিনিট, চোখ বন্ধ করে এই প্রশ্ন কর:
“আজ আমি কী এমন কিছু কিনতে চেয়েছি, যা আসলে আমার দরকার ছিল না?”
শুধু এই প্রশ্নই তোকে নিজের পকেটের মাস্টার বানাবে।
বন্ধুর মতো বলছি, ভাই , খরচে নিয়ন্ত্রণ মানে কিন্তু কৃপণ হওয়া না।
এই নিয়ন্ত্রণ মানে হচ্ছে নিজের চাওয়াকে বুঝে তার মালিক হওয়া। উপনিষদের ভাষায়, “সত্যিকারের স্বাধীনতা মানে নিজেকে চিনে জিনিসের দাসত্ব থেকে বেরিয়ে আসা।”
এই খেলাটা খেলতে শিখলে, টাকায় তো বটেই, জীবনের সব লেভেলেই বিজয়ী হবি।
বল তো, আজ থেকেই শুরু করবি তো?