৬টি উপায় কিভাবে উপনিষদ অনুযায়ী অহংকার থেকে মুক্তি পাবে

ঠিক আছে মেয়েরা, সত্যি বলো, তুমি কি কখনও এমন মনে করেছ, “আমি ঠিক, সবাই ভুল”? কিংবা কখনো নিজের সাফল্যে এতটাই ডুবে গেছ যে মনে হয়েছে, তুমি পৃথিবীর কেন্দ্রে আছো? হ্যাঁ, এটা অহংকার! আর এটা এমন এক বিষ যা আস্তে আস্তে আমাদের সম্পর্ক, আত্মসম্মান এবং মানসিক শান্তিকে ধ্বংস করে ফেলে।

কিন্তু দুশ্চিন্তার কিছু নেই! হাজার বছর আগেই উপনিষদ আমাদের এই সমস্যার উত্তর দিয়ে গেছে। এই প্রাচীন জ্ঞান শুধু যোগী বা সাধুদের জন্য নয়, এগুলো একদম বাস্তব জীবনে প্রযোজ্য! চল, দেখে নিই উপনিষদের মতে অহংকার থেকে মুক্তির ৬টি অবাক করা উপায়! 

১. “আমি” থেকে “আমরা” – অহংকে সমষ্টিতে রূপান্তর করো

উপনিষদ বলে, “ঐক্যমেবাদ্বিতীয়ম্” অর্থাৎ, আমরা সবাই এক। সত্যি বলতে, আমরা কেউ একা নই, আমরা সবাই একে অপরের সঙ্গে জড়িত। তাই যখনই মনে হবে, “আমি এটা অর্জন করেছি,” তখন ভাবো, “আমরা এটা অর্জন করেছি”। সফলতা সবসময় ভাগ করে নেওয়ার মতো কিছু!

 করণীয়: তোমার জীবনের অর্জনগুলো শুধুই নিজের কৃতিত্ব হিসেবে না দেখে, পরিবার, বন্ধু, শিক্ষকের অবদান স্বীকার করো। “আমি” থেকে “আমরা” বলার অভ্যাস করো!

২. ক্ষণস্থায়িত্ব বুঝে নাও – কিছুই চিরস্থায়ী নয়!

উপনিষদ বলে, “অন্যৎ শরণং নাস্তি” অর্থাৎ, এই জগতে কিছুই চিরস্থায়ী নয়। তুমি যদি আজ সবচেয়ে সুন্দরী বা মেধাবী হও, পাঁচ বছর পর পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে। সুতরাং অহংকার করার কিছু নেই!

 করণীয়: প্রতিদিন নিজেকে মনে করিয়ে দাও, “এই জীবন, এই গৌরব, এই সফলতা, সবই ক্ষণস্থায়ী!” এতে অহংকারের জায়গায় কৃতজ্ঞতা আসবে।

৩. সৎকার্য করো, কিন্তু ফলাফলের আশা কোরো না!

“কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন”, গীতা বললেও এর মূলতত্ত্ব উপনিষদ থেকেই এসেছে। অহংকার জন্ম নেয় তখনই, যখন আমরা ফলাফল নিয়ে বেশি চিন্তা করি। তুমি যদি শুধু নিজের কাজটুকু করো, কিন্তু ফলাফলের চিন্তা না করো, তাহলে অহংকারের জায়গা থাকবে না।

 করণীয়: পরীক্ষা দাও, কিন্তু ফলাফলের চিন্তায় পাগল হয়ে যেও না। ভালো কাজ করো, কিন্তু প্রশংসা পাওয়ার জন্য না।

৪. আসল পরিচয় খুঁজে নাও, তুমি এই শরীর নও!

উপনিষদ বলে, “অহং ব্রহ্মাস্মি”, তুমি কেবল এই নাম, রূপ, পরিচয় নও; তুমি আত্মা, তুমি ব্রহ্ম। যখন তুমি বুঝবে তোমার আসল পরিচয় অনেক গভীর, তখন বাহ্যিক পরিচয় নিয়ে অহংকার করার কিছু থাকবে না।

 করণীয়: প্রতিদিন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলো, “আমি শুধুই এই মুখ বা নাম নই, আমি চেতনা, আমি ব্রহ্ম!”

৫. বিনয় চর্চা করো, গাছের মতো হও!

উপনিষদ বলে, “বিদ্যাবিনয়সম্পন্নে ব্রাহ্মণে গবি হস্তিনি”, একজন প্রকৃত জ্ঞানী বিনয়ী হয়। ঠিক যেমন একটা গাছ যত বেশি ফল ধরে, তত বেশি নত হয়।

করণীয়: অন্যদের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনো, ছোট কাজ করতেও দ্বিধা করো না, নিজেকে সবসময় শেখার অবস্থানে রাখো।

৬. ধ্যান করো, অহংকে ধুয়ে ফেলো!

উপনিষদ বলে, “ধ্যানেন আত্মানং পশ্যতি”, ধ্যান করলে আত্ম-অনুভূতি বাড়ে, আর অহংকার কমে। অহংকার মূলত আমাদের মনেই থাকে, আর ধ্যান সেই অহংকে ধুয়ে ফেলার এক জাদুকরী উপায়!

করণীয়: প্রতিদিন মাত্র ৫-১০ মিনিট চোখ বন্ধ করে ধ্যান করো। নিজের শ্বাস নেওয়ার শব্দ শুনো। দেখবে, অহংকার ধীরে ধীরে গলে যাচ্ছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top