৫টি উপায় কিভাবে উপনিষদ অনুযায়ী আলসেমি দূর করবি

বন্ধু, তুই কি মোবাইলটা হাতে নিয়ে শুয়ে শুয়ে ভাবছিস, “কাল থেকে পড়ব”, “এই সপ্তাহে জিম শুরু করব”, “এই ভিডিওটাই শেষ”, আর দিন শেষে কিছুই করিস না?
ওই যে অলসতা, আলসেমি, ভাই, ওটাই তোর আসল শত্রু। আর মজার ব্যাপার হল, আজ থেকে হাজার হাজার বছর আগে উপনিষদের ঋষিরাও এই একই লড়াই করেছেন। তফাৎ শুধু, তারা অলসতাকে ফিলোসফিতে নামিয়ে এনেছেন। আর আজ আমি তোর সঙ্গে সেই ফিলোসফি থেকেই ৫টা সলিড টিপস শেয়ার করব যা তোর মতোই Gen Z ভাইদের জন্য, যারা রিয়েল লাইফে স্ট্রাগল করছে।

 প্রথমে একটু রিয়েল টক: তোর সমস্যাটা আসলে কী?

তুই জানিস তোর পড়াশোনা করা দরকার, শরীর ফিট রাখা দরকার, এমনকি একটা হবি বা সাইড স্কিল শিখে রাখাও জরুরি। কিন্তু সেই “আজ না, কাল করব” ভাবনা, এটাই তো মারছে তোকে! অলসতা মানে শুধু ঘুম নয়, ও মানে একধরনের মানসিক ব্লক। ঠিক সেই সময়টাতে, মোবাইল স্ক্রল করা যতটা সহজ মনে হয়, জীবন গুছিয়ে নেওয়া ততটাই কঠিন লাগে।

এটা শুধু একটা অভ্যাসের সমস্যা নয়, এটা একেবারে মন এর মধ্যে লুকিয়ে থাকা গণ্ডগোল। আর এখানেই উপনিষদ তোকে খুলে খুলে দেখিয়ে দেয়, তোর ভিতরের দানবটা আসলে কে।

 উপনিষদ কী বলে অলসতা নিয়ে?

 “আত্মা অব্যয়, অচঞ্চল, শক্তিশালী। কিন্তু মন যদি দুর্বল হয়, সেই আত্মাও লোকের কাছে দুর্বল বলে মনে হয়।”কঠ উপনিষদ

এই একটা লাইনেই আসল কথা আছে। তুই অলস হোস, কারণ তোর মন আত্মাকে ঢেকে রেখেছে। একে বলে আবরণ। তোকে নিজেই নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দেয় এই অলসতার আবরণ।

 ৫টি কিলার উপায় – উপনিষদের ভাষায় অলসতা কিক করে দে!

১. তোর “আসলে আমি কে” সেটা বুঝে নে – নিজেকে জিজ্ঞেস কর!

 উপনিষদ বারবার বলেছে “তত্ত্বমসि” – তুই ওই পরম চেতনাই, তুই অলস হতে পারিস না।

তোর ভিতরে একটা এমন এনার্জি আছে যেটা জন্ম থেকে অবধি অব্যয়। সেটাকে ফিল করতে হলে দিনে ৫ মিনিট শুধু নিজেকে জিজ্ঞেস কর, “আমি কি সত্যিই এমন যে কিছু করতে পারি না?” দেখবি, ভিতর থেকে একটা গলা আসবে, “না ভাই, পারিস।”

২. আসক্তি কমা মানেই এনার্জি বাড়া!

 তোর Netflix, PUBG, Instagram, সবই ওই আসক্তি। উপনিষদ বলে: “যে ব্যক্তি ইন্দ্রিয়ের দাস নয়, সেও রাজাধিরাজ।”

প্রতিদিন একটা ছোট্ট চ্যালেঞ্জ নে, একটা জিনিস যেটাতে তুই আসক্ত, সেটা ১ ঘণ্টা কমিয়ে দে। প্রথমে কঠিন লাগবে, কিন্তু একটা সপ্তাহ পর তুই নিজেই বলবি, “দাদা, সময়টা পেলাম তো!” 

৩. ধর্ম মানে ধর্মীয় কাজ না, নিজের কর্তব্য বোঝা

 “ধর্মে যে স্থির থাকে, সে জীবনে স্থিরতা পায়”, উপনিষদ বলেছে এমন অনেকবার।

তোর ধর্ম মানে তোর “লাইফ ডিউটি”। যদি তুই ছাত্র হোস, পড়া হচ্ছে ধর্ম। যদি তুই পার্টটাইম কিছু করিস, সেটা ঠিকঠাক করাও তোর ধর্ম। প্রতি সকালে একটা সিম্পল কাজ ঠিক কর: “আজ আমি এটা করব, কারণ এটা আমার কর্তব্য।” ব্যস! অলসতা আসার আগেই তার মাথায় ঘুষি!

৪. মনকে কন্ট্রোল কর, না হলে মন তোকে কন্ট্রোল করবে

 “মন যদি বন্ধুর মত হয়, সে তোর আত্মাকে জাগিয়ে তুলবে; যদি শত্রু হয়, তোর পথ আটকাবে।” – গীতা, যা উপনিষদীয় শিক্ষাতেই ভিত্তি করে লেখা।

তোর মনে দিনরাত কথা চলে: “না এখন না”, “আর একটু পরে”, “আজকে হাল্কা নিচ্ছি”, এইসবই প্রোগ্রামড চিন্তা। এটা থামাতে একটা কাজ কর:

 Pomodoro টেকনিক, ২৫ মিনিট কাজ, ৫ মিনিট রেস্ট। মনকে একটু বকা দে, আবার একটু আদর দে। দেখবি হঠাৎ হঠাৎ মন শোনে তোকে!

৫. “জীবন ছোট, কিন্তু আত্মা চিরন্তন” – এইটা রিয়েলাইজ কর

 উপনিষদ বলে: “যে জানে, সে বাঁচে”, অজ্ঞতা থেকেই অলসতা।

তুই যদি ভাবিস যে জীবন তো “আছে তো আছি”, তাহলে তো কিছুই হবে না। জীবন একটাই নয়, কিন্তু এই জন্মটা একটাই। এটাকে সঠিকভাবে ইউজ না করলে, ভবিষ্যতের তুইই রিগ্রেট করবি। আজকেই একটা তালিকা লিখ:

  • তুই কী কী করতে চাস
  • তোর সবচেয়ে বেশি সময় নষ্ট হয় কোথায়
  • একটা ছোট্ট স্টেপ নে সেই দিক থেকে বেরিয়ে আসার

 শেষ টিপস: ১ মিনিটের “আত্মজাগরণ মন্ত্র” – আজকেই শুরু কর

প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বা রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে এইটা ৩ বার বল:

“অহম্ ব্রহ্মাস্মি” – আমি চেতনা, আমি শক্তি, আমি কর্মক্ষম।

এই মন্ত্রটা শুধু মুখে বলবি না, মনে মনে ফিল কর। চোখ বন্ধ করে ১ মিনিট শুধু নিজের শ্বাসে মন দে। দেখবি, অলসতা তো দূরের কথা, তুই ভিতর থেকেই এক নতুন এনার্জিতে জেগে উঠবি।

 শেষ কথা – ভাই, তুই অলস না, তুই শুধু ভুলে গেছিস তুই কে!

উপনিষদ তোকে শুধু পড়ার জিনিস নয়, এটা তোর প্রতিদিনের “মাইন্ড জিম”। প্রতিবার তুই নিজের অলসতার সাথে লড়বি, তুই আসলে নিজের ভেতরের সেই যোদ্ধাকে জাগিয়ে তুলবি, যে জন্ম থেকেই তোকে দিয়ে অনেক কিছু করাতে চায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top