ভাব, একেবারে ক্লাসের শেষ বেঞ্চে বসে আছো। টিচারের লেকচার পাস হয়ে যাচ্ছে, মাথায় ঢুকছে না কিছুই। মনটা অন্য কোথাও। হয়তো ব্রেকআপের চিন্তা, হয়তো কেরিয়ারের টেনশন, বা ইনস্টায় ওই পারফেক্ট লাইফওয়ালাদের দেখে নিজের লাইফকে “লুজার” মনে হওয়া।
পরিচিত লাগছে তো?
এটা শুধু তোমারই হচ্ছে না, ভাই। আমাদের জেনারেশন, বিশেষ করে Gen Z ছেলে-মেয়েরা , এই টানা ফিল করে। নিজের রাস্তা হারিয়ে ফেলা। নিজের ভ্যালু আর স্ট্যান্ডার্ড অন্যের সাথে কম্পেয়ার করা। “আমি কি আদৌ ভালো আছি?” , এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়ানো।
সমস্যাটা কোথায়?
আমরা বাইরের দুনিয়ার “লাইক”, “ফলোয়ার্স”, গ্রেড, গ্যাজেট, লুকস , এই সবকিছুর পেছনে ছুটছি, অথচ ভেতরটা ফাঁকা পড়ে থাকছে। এই ফাঁকা জায়গাটার কারণ আমাদের চিন্তার ভুল। আর এই চিন্তাকেই বদলে দিতে পারে , প্রাচীন ভারতীয় জ্ঞানের গুপ্তধন, উপনিষদ।
আজ তোমায় শোনাবো এমন ৫টি উপনিষদীয় বাণী, যা তোমার মানসিক GPS কে রিসেট করে দেবে। চল শুরু করি ,
১. “তত্ত্বমসि” , তুমিই সেই।
আমরা ভাবি, “আমি তো ফেইলুর”, “আমি তো তেমন কিছু না।” অথচ উপনিষদ বলে:
“তত্ত্বমসি” , তুমি যা খুঁজছো, সেটি তুমিই।
অর্থাৎ, তোমার ভেতরেই সব সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে। বাইরে খুঁজে খুঁজে ক্লান্ত হয়ো না। নিজেকে চিনতে শেখো। তোমার ভেতরের স্ট্রেংথ জানলে, বাইরের কোন লোকের কমেন্ট তোমায় আর নাড়াতে পারবে না।
২. “আত্মা বহিঃচ অন্তশ্চ” , আত্মা ভেতরেও আছে, বাইরেও।
বন্ধুরা, আমাদের লাইফের প্রায় সব স্ট্রেস আসে ‘কম্প্যারিজন’ থেকে। কিন্তু আত্মা , সেই আসল ‘তুমি’ , বাইরের অ্যাপিয়ারেন্স, মার্কশিট, সোশ্যাল স্ট্যাটাসের চেয়ে অনেক গভীর। উপনিষদ শেখায়, আত্মা সর্বত্র। তাই নিজের সীমাবদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গি ছেড়ে দাও। নিজেকে কেবল ফিজিক্যাল শরীর হিসেবে দেখো না।
৩. “উত্তিষ্ঠত জাগ্রত প্রাপ্য বরণ নিবোধত” , উঠে দাঁড়াও, জেগে ওঠো!
Depression, প্রোক্রাস্টিনেশন, হারিয়ে ফেলা ফোকাস , এসব যখন তোমার জীবন কন্ট্রোল করে, তখন মনে রেখো এই বাণীটা।
উপনিষদ বলে ,
“উঠে দাঁড়াও, জেগে ওঠো এবং জ্ঞানের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ো।”
বসে বসে কিছু হবে না। আজকেই ছোট্ট একটা কাজ শুরু করো , পড়া, শরীরচর্চা, নিজের মনের সাথে কথা বলা। জীবনের রাস্তায় তোমাকেই হাঁটতে হবে।
৪. “ন হি জ্ঞানেন সদৃশং পবিত্রমিহ বিদ্যতে” , জ্ঞানের মতো পবিত্র কিছু নেই।
তোমার চারপাশ বদলাতে চাইলে, আগে ভেতরের জ্ঞান বদলাতে হবে। স্কুল-কলেজের রেজাল্ট ছাড়া, নিজের ‘লাইফ স্কিল’ এবং ‘মাইন্ড সেট’ গড়ে তুলো। উপনিষদ এই ‘সেলফ-এডুকেশন’কেই বলেছে সত্যিকারের মুক্তি।
৫. “ন তস্য কারণং করম্” , আসল আমি কাজের ফলের বাইরে।
Gen Z লাইফের সবচেয়ে বড় ফাঁদ , আমরা সবসময় রেজাল্ট-ড্রিভেন।
“ফল কী হবে?” , এই চিন্তায় কাজ শুরুই করি না। অথচ উপনিষদ বলে, আসল শান্তি আসে ‘ফল’ ছেড়ে ‘কাজে’ মন দেওয়া থেকে।
“Do the work, forget the result.”
ফল নিজে থেকে আসবে।
তোমার আজকের স্পিরিচুয়াল চ্যালেঞ্জ: “আত্মা চেক”
১) চোখ বন্ধ করো।
২) ৩ বার গভীর শ্বাস নাও।
৩) মনে মনে বলো:
“আমি এই শরীর নই, আমি এই চিন্তা নই। আমি সেই চেতনা, যে দেখছে সব।”
মাত্র ২ মিনিট। কোনো জিম লাগবে না, কোনো meditation course লাগবে না।
শুধু প্রতিদিন এই “আত্মা চেক” করলেই, তোমার মানসিক শান্তি লেভেল আপ হবে।
শেষ কথা:
ভাই, দুনিয়ার সব সমস্যার সমাধান বাইরের দুনিয়ায় নেই। তোমার আসল পাওয়ার তোমার ভেতরেই। উপনিষদ শুধু বই না, এটা লাইফের ইউজার ম্যানুয়াল। পড়ো, ভাবো, প্র্যাকটিস করো। একদিন তুমি নিজেই নিজের “Hero’s Journey”-র নায়ক হয়ে উঠবে।