স্বামী-স্ত্রীর দায়িত্ব সম্পর্কে উপনিষদ কী বলে?

জীবনে সুখ এবং শান্তির মূল ভিত্তি হলো দাম্পত্য জীবন। উপনিষদের শিক্ষাগুলো আমাদের জীবনের প্রতিটি দিককে আলোকিত করে, এবং স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। তুমি কি জানো, উপনিষদ শুধু আধ্যাত্মিক শিক্ষা নয়, জীবনের বাস্তব দিকগুলোতেও আমাদের দিশা দেয়?

স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক: উপনিষদের দৃষ্টিকোণ

উপনিষদে বলা হয়েছে, “সত্যম্ শিবম্ সুন্দরম্” অর্থাৎ, সত্য, মঙ্গল এবং সৌন্দর্যই জীবনের আসল উদ্দেশ্য। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ক্ষেত্রেও এই তিনটি গুণ থাকা আবশ্যক। এটি শুধু সামাজিক চুক্তি নয়; বরং দুই আত্মার মিলন।

“অর্ধনারীশ্বর” ধারণা থেকে আমরা বুঝতে পারি, স্বামী-স্ত্রী একে অপরের পরিপূরক। উপনিষদের শ্লোক বলে, “সহ ধ্যায়াত, সহ করাত” — অর্থাৎ, স্বামী ও স্ত্রীকে একসাথে ধ্যান করতে হবে এবং একসাথে কাজ করতে হবে।

পারস্পরিক সম্মান এবং ভালোবাসা

তুমি কি কখনও ভেবে দেখেছ, সম্পর্কের মূল চাবিকাঠি কী? উপনিষদ বলে, “মৈত্রীং করত” — একে অপরের প্রতি বন্ধুত্ব এবং সম্মান বজায় রাখা।

উদাহরণ : যখন কোনো স্বামী তাঁর স্ত্রীর পরিশ্রম এবং আত্মত্যাগকে সম্মান করে, তখন পরিবারে শান্তি বজায় থাকে।

উদাহরণ : তেমনই, স্ত্রী যদি স্বামীর সিদ্ধান্ত এবং পরিশ্রমকে সমর্থন করে, তাহলে সম্পর্ক আরও মজবুত হয়।

একটি শ্লোকে বলা হয়েছে, “যত্র নার্যস্তু পূজ্যন্তে রমন্তে তত্র দেবতাঃ” — যেখানে নারীদের সম্মান করা হয়, সেখানে দেবতারা বাস করেন।

একে অপরকে সমর্থন করা

উপনিষদে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ককে গরু এবং গাড়ির দুই চাকায় তুলনা করা হয়েছে। দুজনের সমান প্রচেষ্টা ছাড়া জীবনের গাড়ি এগিয়ে যেতে পারে না। “সহ বোধনম্” — একে অপরকে বোঝার শিক্ষা দেয় উপনিষদ।

উদাহরণ : স্বামী যদি কর্মক্ষেত্রে সমস্যায় পড়ে, তাহলে স্ত্রীর উচিত তাকে মানসিক সমর্থন দেওয়া।

উদাহরণ : তেমনি, স্ত্রী যদি পারিবারিক চাপের মধ্যে থাকে, তাহলে স্বামীর দায়িত্ব তার পাশে দাঁড়ানো।

ধর্ম এবং আধ্যাত্মিকতা

তুমি কি জানো, উপনিষদে বলা হয়েছে, দাম্পত্য জীবনের সেরা রূপ তখনই সম্ভব, যখন দুজনই ধর্ম এবং আধ্যাত্মিকতার পথে এগিয়ে যায়? “সহ যজ্নায়, সহ তপস্যায়” — স্বামী-স্ত্রীকে একসাথে ধর্মীয় কাজ এবং তপস্যায় অংশ নিতে বলা হয়েছে।

উদাহরণ : কোনো দম্পতি যদি একসাথে প্রার্থনা করে, তাহলে তাদের মধ্যে সম্পর্ক গভীর হয়।

একটি শ্লোকে বলা হয়েছে, “ব্রহ্মচারিণী পত্নী ধর্মপথে স্বামীর সহায়ক” — অর্থাৎ, স্ত্রী হলেন স্বামীর ধর্মপথের সহযাত্রী।

নতুন ভাবনার সূচনা

তুমি কি কখনও ভেবে দেখেছ, যদি প্রতিটি স্বামী-স্ত্রী উপনিষদের এই শিক্ষাগুলো অনুসরণ করে, তাহলে পৃথিবী কতটা সুন্দর হয়ে উঠবে? “সহ প্রার্থনা, সহ চিন্তনম্” — একসাথে প্রার্থনা করো, একসাথে চিন্তা করো।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top