স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থনীতি নিয়ে কোনো শিক্ষা আছে কি?

স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থনীতি নিয়ে কোনো শিক্ষা আছে কি?

আমি যখন স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থনীতি নিয়ে ভাবি, তখন প্রথমেই মনে পড়ে উপনিষদের সেই শাশ্বত বাণী, যা আমাদের জীবনের গভীরতর দিকগুলিকে বুঝতে সাহায্য করে। আপনার জীবনেও নিশ্চয়ই এমন কিছু সময় এসেছে, যখন আপনাকে মনে হয়েছে, “আমি কি প্রকৃতপক্ষে নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তুলতে পারি?”

স্বয়ংসম্পূর্ণতা মানে শুধু আর্থিক দিক থেকে স্বাবলম্বী হওয়া নয়; এটি মানসিক, সামাজিক এবং আধ্যাত্মিক স্বতন্ত্রতার এক সমন্বিত রূপ। “ঈশা বাস্যমিদং সর্বং” (ঈশোপনিষদ) এই ভাবনাটি মনে করিয়ে দেয় যে সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডই একক ও স্বয়ংসম্পূর্ণ। এর অর্থ হলো প্রকৃতির প্রতিটি অঙ্গই একে অপরের সঙ্গে যুক্ত।

স্বয়ংসম্পূর্ণতার ধারণা কীভাবে উপনিষদের সঙ্গে জড়িত?

উপনিষদ আমাদের শেখায় যে নিজের প্রয়োজনের বাইরে কিছুই আহরণ করো না। “তে তেন ভুঞ্জীথাঃ মাগৃহঃ কস্যস্বিদ্ধনম্” এই বাণী বলে যে আমাদের লোভ সংবরণ করতে হবে এবং আমাদের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি কিছু গ্রহণ করা উচিত নয়।

আমার জীবনে একবার আমি একটি ছোটখাটো গ্রামে গিয়েছিলাম, যেখানে মানুষজন তাদের নিজেদের উৎপাদিত ফসল এবং পণ্য দিয়ে নিজেদের জীবনধারণ করত। তারা বাইরের সাহায্য ছাড়াই একেবারে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আপনি যদি এই ধরনের জীবনযাপনের কথা ভাবেন, তাহলে দেখবেন এটি শুধুমাত্র পরিবেশবান্ধব নয়, বরং মানসিক শান্তির দিক থেকেও এটি চমৎকার।

জীবনের প্রতিটি স্তরে স্বয়ংসম্পূর্ণতা

  •  অর্থনৈতিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা
    আপনার কি কখনও মনে হয়েছে, আপনি যদি নিজের হাতে কিছু উৎপাদন করতে পারেন, তাহলে অর্থনৈতিক দিক থেকে আপনি কতটা স্বাধীন হতে পারেন? উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি একটি ছোট সবজি বাগান তৈরি করেন, তাহলে দৈনন্দিন বাজার নির্ভরতায় বড় পরিবর্তন আসতে পারে।
  •  সামাজিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা
    উপনিষদ আমাদের শেখায় “সংঘর্ষে সদা একতা”—যার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ। একে অপরের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমেই আমরা সমাজের শক্তি বৃদ্ধি করতে পারি। আপনি কি কখনও ভেবেছেন, স্থানীয় সম্প্রদায়গুলিকে সাহায্য করলে আপনার নিজের জীবন কতটা সুন্দর হয়ে উঠতে পারে?
  •  আধ্যাত্মিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা
    উপনিষদ বলে, “আত্মা বৈশ্বানরঃ”, অর্থাৎ আপনি নিজেই নিজের পৃথিবী। স্বয়ংসম্পূর্ণতার জন্য আধ্যাত্মিক দিক থেকে শক্তিশালী হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন ধ্যান বা যোগাভ্যাস আপনাকে এই শক্তি অর্জনে সাহায্য করতে পারে।

উপনিষদের শিক্ষা থেকে উদাহরণ

  •  “সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম” (ছান্দোগ্য উপনিষদ)
    এই বাণী আমাদের বলে যে সবকিছুই ঈশ্বরের অংশ। আপনি যদি পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে সংযুক্ত করতে পারেন, তাহলে প্রকৃত অর্থে আপনি স্বয়ংসম্পূর্ণ।
  •  “ধন্যানাং ধ্যানমেব ধনম্” (বৃহদারণ্যক উপনিষদ)
    যে ব্যক্তি ধ্যান করে, সে-ই প্রকৃত ধনী। এর মানে হলো, মনোযোগ এবং একাগ্রতা আপনার জীবনের প্রকৃত সম্পদ হতে পারে।
  •  “আত্মানং বিদ্ধি” (কৈবল্য উপনিষদ)
    নিজেকে জানাই সব শিক্ষার মূল। আপনি যখন নিজের দক্ষতা, সীমাবদ্ধতা এবং শক্তিকে বুঝতে পারবেন, তখন স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন সহজ হবে।

কীভাবে এই শিক্ষা আপনার জীবনে প্রয়োগ করবেন?

  •  প্রকৃতির সঙ্গে যুক্ত হোন
    আপনার চারপাশের পরিবেশের সঙ্গে একাত্ম হোন। একটি ছোট গাছ লাগান, যা শুধু পরিবেশ রক্ষাই করবে না, বরং আপনাকে স্বয়ংসম্পূর্ণ জীবনের এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।
  •  অতিরিক্ত চাহিদা ত্যাগ করুন
    আপনার কি মনে হয়, প্রয়োজনের বাইরে অতিরিক্ত জিনিস কেনা আপনাকে সুখী করে? যদি না করে, তবে অপ্রয়োজনীয় চাহিদা কমানোর চেষ্টা করুন।
  •  শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন
    আপনার প্রতিভাকে কাজে লাগান। নিজের হাতে কিছু তৈরি করা শেখার মাধ্যমে আপনি নিজে উপকৃত হবেন এবং অন্যদেরও উপকার করতে পারবেন।

একটি গভীর উপলব্ধি

আপনাকে শেষ করার আগে একটি প্রশ্ন রেখে যেতে চাই: “আপনার জীবনের কোন জিনিসটি এমন, যা ছাড়া আপনি সত্যিই স্বাধীন বোধ করতে পারবেন না?” উপনিষদ বলে যে প্রকৃত স্বাধীনতা আসে নিজের মধ্যে আত্মজ্ঞান এবং স্বয়ংসম্পূর্ণতা থেকে। আপনি কি সেই স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত?

অতএব, আসুন আমরা উপনিষদের শিক্ষাগুলি আত্মস্থ করি এবং একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ, সুখী এবং পরিপূর্ণ জীবন গড়ে তুলি। “তৎ ত্বমসি”—আপনি নিজেই সেই শক্তি, যা আপনাকে পূর্ণতা দেবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top