আমরা প্রতিদিনের জীবনে সম্পদ এবং ক্ষমতা নিয়ে ভাবনা করি। অনেক সময় এগুলোকে জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য হিসেবে দেখে থাকি। কিন্তু আপনি কি কখনো ভেবেছেন, সম্পদ ও ক্ষমতা আমাদের জীবনে আসলেই কতটা প্রয়োজনীয়? এই প্রসঙ্গে উপনিষদ আমাদের এক অনন্য মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি দেয়, যা জীবনের গভীরতর অর্থকে উপলব্ধি করাতে সহায়ক। আমি আজ আপনাকে এই মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির কথা বলতে চাই।
সম্পদ ও ক্ষমতার প্রকৃত অর্থ
উপনিষদে বলা হয়েছে:
“সত্যমেব জয়তে নানৃতম্।”
অর্থাৎ, সত্যই সর্বদা জয়ী হয়, অসত্য নয়। সম্পদ ও ক্ষমতার প্রতি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে গেলে প্রথমে আমাদের জানতে হবে সত্যের পথ। সম্পদ এবং ক্ষমতা যদি সত্য ও ন্যায়ের জন্য ব্যবহার হয়, তবে তা মানবতার সেবায় আসে। কিন্তু যখন এগুলো ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করা হয়, তখন তা আমাদের সত্য পথ থেকে বিচ্যুত করে।
আপনি নিশ্চয়ই দেখেছেন, এমন অনেক মানুষ আছেন যারা প্রচুর সম্পদ অর্জন করেছেন, কিন্তু জীবনে শান্তি খুঁজে পান না। কারণ সম্পদ একা কখনো শান্তি দিতে পারে না। উপনিষদে আবার বলা হয়েছে:
“ন কাময় মনুষ্য সুখং লভতে।”
অর্থাৎ, ইচ্ছা পূরণের মাধ্যমে মানুষ প্রকৃত সুখ লাভ করতে পারে না।
সম্পদ ও ক্ষমতার মানবিক ব্যবহার: উদাহরণসমূহ
- রাজা জনকের জীবন
রাজা জনক ছিলেন একজন মহান রাজা এবং ধনী ব্যক্তি। কিন্তু তিনি সম্পদ ও ক্ষমতার দাস ছিলেন না। তিনি তার রাজত্বকে মানুষের কল্যাণে উৎসর্গ করেছিলেন। তার জীবন আমাদের শেখায় যে সম্পদ ও ক্ষমতা যখন সঠিক পথে ব্যবহার হয়, তখন তা সমাজের উপকারে আসে।
- করুণার উদাহরণ: মা তেরেসা
যদিও তিনি উপনিষদ অনুসরণ করেননি, তবু তার জীবন উপনিষদের শিক্ষা প্রতিফলিত করে। তার কাছে সম্পদ বা ক্ষমতা ছিল না, কিন্তু তিনি তার মনুষ্যত্ব দিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন পরিবর্তন করেছেন।
- আধুনিক সময়ে মহাত্মা গান্ধী
গান্ধীজী কখনো সম্পদ বা ক্ষমতার পেছনে ছোটেননি। তার সাদাসিধে জীবন এবং আত্মনির্ভরতা আমাদের শিক্ষা দেয় যে, সম্পদ ও ক্ষমতার প্রকৃত অর্থ মানবতার কল্যাণে ব্যবহার।
আপনার জীবনে সম্পদ ও ক্ষমতার ভূমিকা
আপনি যদি নিজের জীবনে সম্পদ ও ক্ষমতাকে মানবিকভাবে ব্যবহার করতে চান, তাহলে প্রথমে নিজের চাহিদা এবং ইচ্ছার মধ্যে পার্থক্য খুঁজে বের করুন।
উপনিষদে বলা হয়েছে:
“ইশাবাস্যমিদং সর্বং যৎ কিঞ্চ জগত্যাং জগৎ।”
অর্থাৎ, এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের প্রতিটি বস্তু ঈশ্বর দ্বারা পরিবেষ্টিত। তাই আমাদের প্রতি বস্তুতে ঈশ্বরের উপস্থিতি উপলব্ধি করতে হবে।
যখন আপনি নিজের সম্পদকে মানুষের সাহায্যে ব্যবহার করবেন, তখন আপনার জীবনে প্রকৃত তৃপ্তি আসবে। নিজের ইচ্ছাগুলোকে সংযত করে আপনি একটি শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন করতে পারবেন।
তিনটি পদক্ষেপ: মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার উপায়
১. নিজের চাহিদাকে বোঝা: আপনি কি সত্যিই যা চান তা প্রয়োজন?
২. ক্ষমতার সঠিক ব্যবহার: আপনার ক্ষমতা কি অন্যের কল্যাণে ব্যবহার হচ্ছে?
৩. ধ্যান ও আত্মবিশ্লেষণ: উপনিষদের মতো গ্রন্থ পড়ে নিজের আত্মাকে বিশ্লেষণ করুন।
উপনিষদে বলা হয়েছে:
“তস্য বৈ তপসা বিদ্যয়া যশমেধায়া ব্রম্মচর্যেণাশ্রভ্যং।”
অর্থাৎ, তপস্যা, শিক্ষা, সত্য পথ এবং আত্মসংযমের মাধ্যমে মানুষ প্রকৃত জ্ঞান লাভ করতে পারে।
জীবনের প্রকৃত দৃষ্টি
শেষে, আমি আপনাকে একটি প্রশ্ন রেখে যেতে চাই: আপনি কি সত্যিই আপনার জীবনে সম্পদ ও ক্ষমতার মানবিক ব্যবহার করছেন?
উপনিষদ আমাদের শিখায় যে, সত্য পথের অনুসরণ এবং মানবতার প্রতি ভালোবাসা আমাদের জীবনের সঠিক লক্ষ্য হতে পারে। আপনি যদি সম্পদ ও ক্ষমতাকে মানবতার কল্যাণে ব্যবহার করেন, তবে আপনার জীবনও অর্থপূর্ণ হয়ে উঠবে।
“শান্তি শান্তি শান্তি।”