উপনিষদ আমাদের জীবনের প্রতিটি দিক নিয়ে আলোচনার এক অসীম জ্ঞানভাণ্ডার। সততা ও ন্যায়বিচার সম্পর্কে উপনিষদ যা শিক্ষা দেয়, তা কেবল তত্ত্ব নয়; বরং আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগযোগ্য এক অনন্য দর্শন। আপনি কি জানেন, উপনিষদের অনেক শিক্ষাই আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে সততা আর ন্যায়বিচার ছাড়া জীবনের সঠিক পথ খুঁজে পাওয়া অসম্ভব?
সততা: উপনিষদের মৌলিক নীতি
উপনিষদে সততাকে আত্মজ্ঞান লাভের এক অপরিহার্য গুণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ঈশোপনিষদে বলা হয়েছে:
“সত্যমেব জয়তে নানৃতম্।”
অর্থাৎ, শুধুমাত্র সত্যই জয়লাভ করে; মিথ্যা কখনো টিকে থাকতে পারে না। এই উক্তিটি আমাদের শিখিয়ে দেয় যে জীবনের যেকোনো পরিস্থিতিতে সত্যের পথে থাকা উচিত। সততা মানে কেবল সত্য কথা বলা নয়, বরং নিজের ভেতরের আর বাইরের আচরণে সামঞ্জস্য বজায় রাখা।
একবার ভাবুন, যদি আমরা প্রতিদিন সত্যের পথে থাকি, তবে জীবনে শান্তি আর আনন্দ কত সহজেই লাভ করা সম্ভব! সনাতন ধর্মের মহাভারত থেকেও এর উদাহরণ পাই। যখন যুধিষ্ঠির দুঃশাসনের পাশা খেলার প্রস্তাব গ্রহণ করেন, তখন তিনি সততার কারণে শর্ত মেনে নেন। যদিও এটি তাঁর জীবনে অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসে, তবুও সততার পথে তিনি কখনো বিচ্যুত হননি।
ন্যায়বিচার: ধর্মের অন্যতম স্তম্ভ
উপনিষদে ন্যায়বিচারকে ধর্মের মূল স্তম্ভ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ন্যায়বিচার মানে প্রতিটি মানুষের প্রতি সমান আচরণ করা এবং প্রত্যেককে তাদের প্রাপ্য মর্যাদা দেওয়া। বৃহদারণ্যক উপনিষদে বলা হয়েছে:
“অহিংসা পরম ধর্ম:”
অর্থাৎ, অন্যায় আচরণ থেকে নিজেকে বিরত রেখে প্রতিটি প্রাণীর প্রতি ন্যায় করা আমাদের প্রধান কর্তব্য।
আমাদের সনাতন ধর্মের আরেকটি চমৎকার উদাহরণ হলো ভগবান রামের জীবন। রামচন্দ্র যখন সীতাকে উদ্ধার করতে যান, তখন তিনি রাবণের প্রজাদের প্রতি ন্যায়পরায়ণ আচরণ করেন। লঙ্কায় রাবণের অত্যাচারের বিরুদ্ধে তিনি যুদ্ধ করেন, কিন্তু কখনো অযথা কাউকে ক্ষতি করেননি। রামের এই আচরণ আমাদের শেখায়, ন্যায়বিচার মানে কেবল শাস্তি দেওয়া নয়, বরং সঠিকের পক্ষে দাঁড়ানো।
সততা ও ন্যায়বিচারের মিল
উপনিষদে সততা আর ন্যায়বিচারকে একে অপরের পরিপূরক হিসেবে দেখা হয়েছে। যদি আপনি ন্যায়বিচার করতে চান, তবে সততার পথ ছাড়া তা সম্ভব নয়। আবার, যদি আপনি সততার পথে চলেন, তবে ন্যায়বিচারের প্রশ্নে আপনি কখনো ভুল করবেন না।
একটি গল্প মনে পড়ছে। চাণক্য উপদেশে বলা হয়েছে এক রাজা একবার বিচার করতে গিয়ে নিজের প্রিয়জনকে অপরাধী হিসেবে শাস্তি দিয়েছিলেন। কারণ তিনি জানতেন, যদি তিনি সত্যের পথে না থাকেন, তবে তাঁর রাজ্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে না। রাজা তাঁর রাজ্যবাসীর প্রতি সততা ও ন্যায়বিচারের যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন, তা আজও আমাদের জন্য শিক্ষণীয়।
সনাতনী জীবনধারায় সততা ও ন্যায়বিচার
আমাদের সনাতন ধর্মে সততা ও ন্যায়বিচার শুধু শাস্ত্রে পড়ার বিষয় নয়; এগুলি আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রাসঙ্গিক। আপনি যদি একজন সৎ মানুষ হন, তবে আপনার আশপাশের মানুষ আপনাকে সম্মান করবে। আবার, যদি আপনি ন্যায়বিচার করতে পারেন, তবে সমাজে আপনার অবস্থান হবে দৃঢ়।
তাই উপনিষদের এই চিরন্তন শিক্ষা মনে রেখে চলুন। কারণ, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সততা আর ন্যায়বিচার আমাদের সঠিক পথ দেখায়।
ধর্মপথে এগিয়ে চলুন
উপনিষদের জ্ঞান আর সনাতন ধর্মের শিক্ষাই আমাদের জীবনের আলো। সততা আর ন্যায়বিচারের পথেই রয়েছে প্রকৃত মুক্তি।