সনাতন ধর্মের ভিত্তি হল সত্য। উপনিষদে বলা হয়েছে, সত্যই ব্রহ্ম, সত্যই জীবন। কিন্তু মিথ্যার স্থান কোথায়? আমাদের প্রাচীন শাস্ত্র ও উপনিষদ এই প্রশ্নের জবাবে অসাধারণ কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছে। আজ আমরা মিথ্যার প্রকৃতি, তার প্রভাব এবং উপনিষদের আলোকে এর গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করব।
মিথ্যার প্রকৃতি: উপনিষদ কী বলে?
উপনিষদে বলা হয়েছে:
“সত্যং ব্ৰহ্ম তৎ স্বত্ত্যম্”
অর্থাৎ, সত্যই ব্রহ্ম। সত্যের পথই হল মোক্ষের পথ। মিথ্যা হলো সেই পথের বিপরীত। মিথ্যা বলার ফলে মানুষ নিজের আত্মাকে দূষিত করে, যা জীবনের পরম লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথে অন্তরায় সৃষ্টি করে।
উপনিষদে মিথ্যাকে অজ্ঞানতা এবং আসুরিক প্রবৃত্তির অংশ হিসেবে দেখা হয়। মিথ্যার দ্বারা জীবনের শৃঙ্খলা নষ্ট হয় এবং আত্মার সঠিক বিকাশে বাধা পড়ে।
মিথ্যার প্রভাব: কীভাবে এটি জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে?
মিথ্যা বলার ফলে শুধু আত্মার ক্ষতি হয় না, সমাজেও অশান্তি সৃষ্টি হয়। যখন কেউ মিথ্যার আশ্রয় নেয়, তখন সে তার সত্যিকার আত্মপরিচয় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এটি কেবল ব্যক্তিগত সম্পর্ক নয়, সামগ্রিক সমাজের ভিত্তিকেও দুর্বল করে।
উপনিষদে বলা হয়েছে:
“মিথ্যা বললে সত্য দূরে সরে যায়। সত্যই হল ধর্ম।”
যখন মিথ্যা প্রবল হয়, তখন ধর্মের নীতি দুর্বল হয়ে যায়। সত্যের অভাব সমাজে অবিচার, দুঃখ এবং হিংসার জন্ম দেয়।
উপনিষদের উদাহরণ: সত্য ও মিথ্যার যুদ্ধ
উপনিষদে সত্য ও মিথ্যার মধ্যে দ্বন্দ্বের কিছু কাহিনি পাওয়া যায়। যেমন, ঋগ্বেদের এক অংশে বলা হয়েছে দেবতারা সত্যকে ধরে রাখার জন্য সংগ্রাম করেছিলেন, আর অসুরেরা মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছিল। সত্য শেষ পর্যন্ত বিজয় লাভ করেছিল, কারণ সত্য চিরন্তন।
যুধিষ্ঠিরের সত্যবাদিতা
মহাভারতে যুধিষ্ঠির ছিলেন সত্যের আদর্শ উদাহরণ। তিনি জীবনে কখনো মিথ্যার আশ্রয় নেননি। যদিও যুদ্ধক্ষেত্রে তাঁর একমাত্র মিথ্যা “অশ্বত্থামা হতো” বলার ফলে বড় বিপর্যয় ঘটেছিল, তিনি নিজেই সেই কাজের জন্য গভীর অনুশোচনা করেছিলেন। এই ঘটনা আমাদের শেখায় যে, সামান্য মিথ্যা বললেও তার প্রভাব কতখানি গুরুতর হতে পারে।
মিথ্যার বিরোধিতা এবং সত্যের প্রতিষ্ঠা
উপনিষদে সত্যের প্রতি অটল থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তিত্তিরীয় উপনিষদে উল্লেখ আছে:
“সত্যম্ বদন্তম্ ধর্মম্ চরত।”
অর্থাৎ, সর্বদা সত্য বলো এবং ধর্মের পথ অনুসরণ করো।
মিথ্যা বলা কেবল কর্ম নয়, এটি আসলে আমাদের চেতনায় একটি গভীর দাগ ফেলে। প্রতিদিনের জীবনে মিথ্যার থেকে দূরে থাকাই সনাতন ধর্মের একটি মূল বার্তা।
মিথ্যার ঊর্ধ্বে সত্যের জয়
আমাদের সনাতন ধর্মের শিক্ষায় বলা হয়েছে, সত্যই পরম ধর্ম। মিথ্যা হয়তো সাময়িক সুবিধা দিতে পারে, কিন্তু সত্য সর্বদা দীর্ঘমেয়াদে ফলপ্রসূ। সত্যের পথ ধরে চলাই আত্মার মুক্তির চাবিকাঠি।
তাই, আসুন আমরা উপনিষদের পথনির্দেশ মেনে জীবনে সত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করি। সত্যই আমাদের সনাতন ধর্মের মূল স্তম্ভ, আর সত্যই আমাদের আধ্যাত্মিক মুক্তির মাধ্যম।
“সত্যমেব জয়তে!”