ভূমির প্রতি শ্রদ্ধা ও যত্ন নেওয়ার গুরুত্ব কীভাবে বলা হয়েছে?

ভূমির প্রতি শ্রদ্ধা ও যত্ন নেওয়ার গুরুত্ব কীভাবে বলা হয়েছে?

সনাতন ধর্মে প্রকৃতিকে দেবতাস্বরূপ দেখানো হয়েছে। উপনিষদ, যা আমাদের ধর্মীয় জ্ঞানের অন্যতম আধার, প্রকৃতি এবং বিশেষ করে ভূমিকে ‘জননী’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। ভূমি আমাদের জীবন ধারণের জন্য সবকিছু প্রদান করে—অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, এমনকি বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় বায়ু এবং জল। ভূমির প্রতি যত্ন নেওয়া এবং তাকে সুরক্ষিত রাখা আমাদের নৈতিক এবং ধর্মীয় দায়িত্ব।

উপনিষদের শিক্ষা: ভূমি মাতার প্রতি শ্রদ্ধা

ঋগ্বেদের একটি স্তোত্রে ভূমিকে “মাতা ভূমিঃ পুত্রোহং পৃথিব্যাঃ” বলা হয়েছে, যার অর্থ, “ভূমি আমার মাতা এবং আমি তার পুত্র।” এই শব্দগুলো ভূমির প্রতি আমাদের অবিচল শ্রদ্ধা এবং দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। উপনিষদে বলা হয়েছে, প্রকৃতির সম্পদ হলো ঈশ্বরের দান, যা আমাদের শুধু প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করা উচিত, অপচয় বা ধ্বংস নয়।

প্রাচীন উদাহরণ: ভূমি রক্ষার দায়িত্ব

সনাতন ধর্মের গ্রন্থগুলোতে আমরা ভূমির প্রতি যত্ন নেওয়ার অসংখ্য উদাহরণ পাই। “রামায়ণ”-এ রাজা রামকে দেখা যায় ভূমির প্রতি দায়িত্বশীল রাজা হিসেবে, যিনি তাঁর প্রজাদের জন্য প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করেছেন। মহাভারতেও কৃষ্ণ ভূমি এবং প্রকৃতির সুরক্ষা এবং ভারসাম্যের গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছেন।

ভগবদ্গীতার একটি শ্লোকে বলা হয়েছে:
“যজ্ঞার্থাৎ কর্মণোন্যত্র লোকোऽয়ং কর্মবন্ধনঃ।”
(অধ্যায় ৩, শ্লোক ৯)
এর অর্থ, যদি আমাদের কাজ ঈশ্বর বা প্রকৃতির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশে উৎসর্গ না করা হয়, তবে তা আমাদের জীবনে বন্ধন সৃষ্টি করে। এই শ্লোক থেকে বোঝা যায়, ভূমির যত্ন নেওয়া আমাদের আধ্যাত্মিক দায়িত্ব।

ভূমি রক্ষার বর্তমান প্রাসঙ্গিকতা

আজকের দিনে ভূমি দূষণ এবং পরিবেশের অবক্ষয় আমাদের জন্য একটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের সনাতন ধর্মের সেই প্রাচীন জ্ঞানকে কাজে লাগানো উচিত। যেমন—গাছ রোপণ করা, ভূমি দূষণ বন্ধ করা, এবং প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয় রোধ করা।

উপনিষদে শেখানো হয়েছে যে, ভূমির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক শুধুই ভোগের নয়, এটি এক অন্তরঙ্গ এবং পবিত্র সম্পর্ক। যখন আমরা ভূমির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করি, তখন প্রকৃতি আমাদের তার সর্বোত্তম দান প্রদান করে।

আপনার ভূমিকা: ভূমি সুরক্ষায় এগিয়ে আসুন

আপনার এবং আমার মতো প্রত্যেক মানুষের ভূমি রক্ষার জন্য নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করা উচিত। ছোট ছোট কাজের মাধ্যমেও আমরা ভূমির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে পারি। উদাহরণস্বরূপ, জৈব সার ব্যবহার করা, প্লাস্টিক দূষণ রোধ করা, এবং জল সংরক্ষণ করা।

সনাতন ধর্মের এই অনুপ্রেরণাগুলি আমাদের শিখিয়েছে যে, আমরা যদি প্রকৃতি ও ভূমির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই, তবে জীবনের প্রতিটি স্তরে সুখ ও শান্তি অর্জন করা সম্ভব। তাই আসুন, আমরা সবাই ভূমিকে মা হিসেবে সম্মান জানাই এবং তার সুরক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ হই।

“ধর্মে থাকুন, প্রকৃতিকে ভালোবাসুন।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top