বিবাহিত জীবনে পারস্পরিক সহমর্মিতার ভূমিকা কী?

বিবাহিত জীবন এক বিশেষ অধ্যায়। এখানে তুমি আর তোমার সঙ্গী একসাথে জীবনের পথচলা শুরু করো। এই পথচলায় নানা রকম বাধা-বিপত্তি আসবেই, কিন্তু সহমর্মিতাই সেই মূল মন্ত্র যা তোমাদের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করতে পারে। আমি আজ তোমার সাথে এই বিষয়েই কথা বলতে চাই—উপনিষদের আলোকে বিবাহিত জীবনে পারস্পরিক সহমর্মিতার গুরুত্ব।

সহমর্মিতা: সম্পর্কের ভিত

সহমর্মিতা মানে হলো অন্যের অনুভূতিকে বুঝতে পারা এবং তাকে সম্মান দেওয়া। উপনিষদে বলা হয়েছে, “আত্মানং বিদ্ধি” (“নিজেকে জানো”)। নিজেকে জানার মাধ্যমে তুমি অন্যকে বুঝতে শিখবে। যখন তুমি তোমার সঙ্গীর আনন্দ বা দুঃখের কারণগুলো বোঝো, তখন সম্পর্ক আরও গভীর হয়।

উদাহরণস্বরূপ, ধরো, তোমার সঙ্গী কাজের চাপের কারণে ক্লান্ত। তুমি যদি এই ক্লান্তিটা বোঝো এবং তাকে কিছুটা বিশ্রাম নিতে সাহায্য করো, তাহলে সে অনুভব করবে যে তুমি তাকে সত্যিই ভালোবাসো। এমন ছোট্ট ছোট্ট সহানুভূতিগুলোই বড় সম্পর্কের ভিত্তি গড়ে তোলে।

উপনিষদের শিক্ষা: একে অপরকে সম্পূর্ণ করা

উপনিষদে বলা হয়েছে, “তত্ত্বমসি” (“তুমি সেটাই”)। এর মানে হলো, আমরা একে অপরের মধ্যে এক অভিন্ন সত্তার অংশ। এই দর্শন যদি তুমি তোমার বিবাহিত জীবনে প্রয়োগ করো, তাহলে দেখবে সম্পর্ক আরও মধুর হবে।

ধরো, তোমার সঙ্গী কোনো একটি বিষয়ে ভুল করেছে। তুমি যদি তার ভুলকে ক্ষমা করে তার পাশে দাঁড়াও, তাহলে সে অনুভব করবে যে তুমি তার প্রতি সহমর্মী। এটাই সহমর্মিতার প্রকৃত উদাহরণ।

ছোট ছোট কাজের গুরুত্ব

তুমি কি কখনো ভেবে দেখেছো, একটা ছোট কাজ কিভাবে তোমার সম্পর্ককে বদলে দিতে পারে? একদিন আমি আমার এক বন্ধুর গল্প শুনেছিলাম। তার সঙ্গী প্রতিদিন সকালে তার জন্য এক কাপ চা বানিয়ে দিত। এটা খুব সাধারণ কাজ, কিন্তু এতে তাদের সম্পর্কের গভীরতা বেড়ে গিয়েছিল। উপনিষদে বলা হয়েছে, “পরোপকারার্থং ইদং শরীরম” (“এই শরীর অন্যের উপকারের জন্য”)।

তুমি যদি প্রতিদিন ছোট ছোট কাজ দিয়ে তোমার সঙ্গীর প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করো, তাহলে দেখবে সম্পর্ক কতটা মজবুত হয়।

বিবাদে সহমর্মিতা: উপনিষদের দৃষ্টিভঙ্গি

বিবাহিত জীবনে ঝগড়া তো হবেই। কিন্তু ঝগড়ার সময় কীভাবে সহমর্মিতা দেখানো যায়? উপনিষদ বলে, “শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ”। শান্তি রক্ষা করাই সব কিছুর মূল।

ধরো, কোনো বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতপার্থক্য হলো। তুমি যদি শান্ত থেকে তার কথা শোনো এবং তারপর তোমার দৃষ্টিভঙ্গি তাকে বোঝাও, তাহলে সমস্যা সহজেই সমাধান হবে। সহমর্মিতা মানে শুধু তার কষ্ট বোঝা নয়, তার মতামতকেও সম্মান করা।

চারটি মূল উপায় সহমর্মিতা চর্চা করার

  •  সুনির্দিষ্ট সময় কাটানো: প্রতিদিন অন্তত কিছু সময় তোমার সঙ্গীর সাথে একান্তে কাটাও। এই সময়ে তোমরা একে অপরের অনুভূতি ও ভাবনা শেয়ার করতে পারবে।
  •  ভালো শ্রোতা হও: উপনিষদে বলা হয়েছে, “শ্রুতি” বা শোনার গুরুত্ব। ভালো শ্রোতা হওয়া সম্পর্কের উন্নতিতে সহায়ক।
  •  ছোট ছোট আনন্দ উদযাপন: যেকোনো ছোট খুশির মুহূর্ত একসাথে উদযাপন করো। এতে সম্পর্কের প্রতি ইতিবাচকতা বাড়ে।
  •  ক্ষমার মনোভাব: উপনিষদে বলা হয়েছে, “ক্ষান্তি পরমম তপঃ” (“ক্ষমাই পরম তপস্যা”)। ক্ষমার মাধ্যমে সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়।

উপনিষদের দৃষ্টিকোণে বিবাহিত জীবনের অর্থ

উপনিষদ বলে, “সহ নৌ যশঃ। সহ নৌ মনঃ।” অর্থাৎ, একে অপরের প্রতি সম্মান এবং মন দিয়ে সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। বিবাহিত জীবন কেবল দায়িত্বের বন্ধন নয়; এটি এক অভূতপূর্ব যাত্রা, যেখানে তোমরা একে অপরের আত্মার পরিপূরক।

আমি নিজে যখন এই শিক্ষাগুলো সম্পর্কে চিন্তা করি, তখন বুঝি, বিবাহিত জীবন শুধুই একটি সামাজিক বন্ধন নয়, এটি জীবনের এক মহান সাধনা। যদি আমরা উপনিষদের শিক্ষাগুলো বিবাহিত জীবনে প্রয়োগ করতে পারি, তাহলে আমাদের জীবন হয়ে উঠবে আরও অর্থবহ।

একটি ভাবনার দিক নির্দেশনা

অতএব, সহমর্মিতা শুধু একটি গুণ নয়; এটি এক অভ্যাস, যা প্রতিদিন চর্চা করতে হয়। উপনিষদ আমাদের শিখিয়েছে, সম্পর্কের মূল ভিত্তি হলো আত্মার মিলন। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top