বিবাহিত জীবনকে আমরা অনেকেই সুখের নীড় মনে করি। তবে সত্যি বলতে কি, এই সুখের নীড় গড়ে তুলতে গেলে আমাদের ধৈর্য ও সহনশীলতার মতো গুণগুলো খুবই প্রয়োজন। আমি যখন প্রথম বিয়ে করলাম, তখন বুঝতেই পারিনি যে, একজন মানুষের সঙ্গে সারাজীবন কাটানোর মানে শুধু ভালো সময় ভাগ করে নেওয়া নয়, বরং কঠিন সময়েও একে অপরের পাশে থাকা।
ধৈর্যের মর্মার্থ
আপনিও নিশ্চয়ই শুনেছেন, “ধৈর্য হলো মনের শক্তি।” উপনিষদে বলা হয়েছে:
“ধৃতির্যত্নং মহৎ।”
(ধৈর্য বড় রত্ন।)
এই বাক্যটি প্রথম যখন পড়ি, তখন তার গভীরতা পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পারিনি। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে বুঝলাম, ধৈর্য না থাকলে সম্পর্কের ছোটখাটো সমস্যা বড় আকার ধারণ করতে পারে। ধৈর্যশীল মন আমাদের সংকটময় মুহূর্তেও শান্ত থাকতে সাহায্য করে।
আপনি হয়তো ভাবছেন, ধৈর্য কীভাবে বিবাহিত জীবনে প্রভাব ফেলে? উদাহরণ হিসেবে বলা যাক, আপনার সঙ্গী হয়তো কোনো কারণে আপনার ওপর রেগে গেছেন। যদি আপনিও রেগে যান, তবে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। কিন্তু আপনি যদি ধৈর্য ধরে তার অনুভূতিগুলো বোঝার চেষ্টা করেন, তবে সমস্যার সমাধান অনেক সহজ হয়ে যায়।
সহনশীলতার গুরুত্ব
সহনশীলতা ছাড়া সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী করা প্রায় অসম্ভব। প্রতিটি মানুষের ব্যক্তিত্ব, অভ্যাস এবং দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। উপনিষদে বলা হয়েছে:
“একং সদ্বিপ্রা বহুধা বদন্তি।”
(সত্য এক, কিন্তু জ্ঞানীরা একে বিভিন্নভাবে প্রকাশ করেন।)
এই শ্লোকটি আমাদের শেখায়, প্রত্যেকের নিজের মতো করে সত্য উপলব্ধি করার অধিকার রয়েছে। আপনার সঙ্গী হয়তো কোনো বিষয়ে আপনার সঙ্গে একমত নাও হতে পারেন, কিন্তু সহনশীলতার মাধ্যমে আপনি তার দৃষ্টিভঙ্গিকে সম্মান জানাতে পারেন।
উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, সংসারের খরচ নিয়ে কোনো মতপার্থক্য হয়েছে। যদি আপনি সহনশীলতার সঙ্গে বিষয়টি মোকাবিলা করেন, তবে সমস্যাটি সহজেই সমাধান করা সম্ভব।
বাস্তব জীবনের উদাহরণ
আমার এক বন্ধুর গল্প বলি। তার বিবাহিত জীবনে প্রথম বছর খুব কঠিন সময় কেটেছিল। তার সঙ্গী খুব আবেগপ্রবণ ছিলেন, আর তিনি ছিলেন বাস্তববাদী। তাদের মধ্যে অনেক ঝগড়া হত। কিন্তু একদিন সে উপনিষদের একটি শ্লোক পড়ল:
“আত্মা সর্বং বিজানাতি।”
(আত্মা সবকিছু জানে।)
এই শ্লোক থেকে সে বুঝল, সঙ্গীর অনুভূতি বোঝা এবং মেনে নেওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তখন থেকে সে ধৈর্য আর সহনশীলতার সাহায্যে সম্পর্ককে সুন্দর করে তুলেছে।
ধৈর্য ও সহনশীলতার চর্চা কীভাবে করবেন?
- সময় দিন: আপনার সঙ্গীর আচরণ বা চিন্তাধারা বোঝার জন্য সময় দিন।
- আলোচনা করুন: ঝগড়া এড়িয়ে, শান্ত মাথায় সমস্যার সমাধান নিয়ে আলোচনা করুন।
- আত্ম-পর্যালোচনা: নিজের ভুলগুলো মেনে নিয়ে সেগুলো সংশোধনের চেষ্টা করুন।
- উপনিষদের জ্ঞান চর্চা: প্রতিদিন কিছুটা সময় উপনিষদের শ্লোক পড়ে তার ভাবনা নিয়ে চিন্তা করুন।
উপনিষদের আরও প্রাসঙ্গিক শ্লোক
- “সত্যং বৃষ্ণুতে।” (সত্য সবকিছু ধরে রাখে।) – সত্যবাদিতা এবং সৎ আচরণ সম্পর্ক মজবুত করে।
- “মৈত্রীং সর্বভূতেষু।” (সব জীবের প্রতি মৈত্রী ভাবনা রাখো।) – এটি আপনাকে সম্পর্কের মধ্যে আরও সহানুভূতিশীল হতে সাহায্য করবে।
শেষ কথা
বিবাহিত জীবনে ধৈর্য ও সহনশীলতা শুধু একটি গুণ নয়, এটি সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার মূল স্তম্ভ। আপনার জীবনে এই গুণগুলো কীভাবে প্রভাব ফেলেছে, তা নিয়ে ভেবেছেন কখনও? উপনিষদে বলা হয়েছে:
“আত্মনং বিদ্ধি।”
(নিজেকে জানো।)