পারিবারিক সংকটের মূল কারণ ও তা দূর করার উপায়: উপনিষদের আলোকে

পারিবারিক জীবনে সমস্যা যেন এক অপরিহার্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন, কেন এই সংকট? কীভাবে আমরা এসব সমস্যার সমাধান পেতে পারি? উপনিষদ, প্রাচীন ভারতীয় জ্ঞানের আধার, আমাদের জীবনের গভীরতম প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে সক্ষম। আজ আমি আপনাকে নিয়ে যাবো সেই প্রাচীন শাস্ত্রের পথে, যেখানে আপনি খুঁজে পাবেন আপনার সমস্যার সমাধান।

সংকটের মূল কারণ: কী বলছে উপনিষদ?

যখন পরিবারে অশান্তি দেখা দেয়, এর মূল কারণ প্রায়শই “আত্মকেন্দ্রিকতা।” ঈশ উপনিষদ বলে:
“ঈশা বাস্যমিদং সর্বং যৎ কিঞ্চ জগত্যাং জগৎ। তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জীথা মা গৃধঃ কস্যস্বিদ্ধনম।”
অর্থাৎ, এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের প্রতিটি কণাই ঈশ্বরময়। যখন আমরা নিজস্ব লাভের জন্য অন্যকে শোষণ করি, তখনই সংকটের জন্ম হয়। আপনি কি লক্ষ্য করেছেন, আপনার পরিবারের ছোট ছোট ঝগড়াগুলোর পেছনে বেশিরভাগ সময় লুকিয়ে থাকে “আমার অধিকার” অথবা “আমার ইচ্ছা” পূরণের তাড়না?

উপনিষদ আরও বলে:
“ন কর্মণা ন প্রজয়া ধনেন ত্যাগেনৈকে অমৃতত্বমানশুঃ।”
অর্থাৎ, সম্পদ বা কাজের মাধ্যমে নয়, কেবল ত্যাগের মনোভাবই আপনাকে শান্তি দিতে পারে। পারিবারিক জীবনের ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যখন আপনি ত্যাগ করতে শিখবেন, তখন দেখবেন অশান্তি ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে।

 পারিবারিক সম্প্রীতির অভাব

একটি উদাহরণ দিই। ধরুন, আপনি এবং আপনার ভাই একটি সম্পত্তি নিয়ে ঝগড়ায় লিপ্ত। এই ক্ষেত্রে, ঈশ উপনিষদের দর্শন গ্রহণ করে আপনি যদি ভাবতে পারেন, “এই সম্পত্তি আসলে ঈশ্বরের, আমরা কেবল এর রক্ষক,” তাহলে সহজেই সমাধান সম্ভব। এই ভাবনার মাধ্যমে আপনি একে অপরের প্রাপ্য সম্মান দিতে পারবেন।

 পারিবারিক জীবনে অহংকারের প্রভাব

বৃহদারণ্যক উপনিষদ বলে:
“আত্মানং বিদ্ধি।”
অর্থাৎ, আত্মাকে জানো। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে যখন অহংকার জন্ম নেয়, তখন সমস্যার সৃষ্টি হয়। আপনি কি জানেন কেন? কারণ আমরা একে অপরকে বোঝার চেষ্টা করি না। অহংকার আপনাকে কেবল নিজের দৃষ্টিভঙ্গিতে আটকে রাখে।

ধরুন, আপনার এবং আপনার জীবনসঙ্গীর মধ্যে মতের অমিল হচ্ছে। আপনি যদি আত্মজ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করেন এবং বুঝতে পারেন যে আপনার সঙ্গীও আপনার মতোই ঈশ্বরের অংশ, তখন আপনার অহংকার দূর হবে, এবং সম্পর্ক আরও মজবুত হবে।

উপায়: কীভাবে উপনিষদের শিক্ষাগুলো বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করবেন?

 ধ্যানের মাধ্যমে সম্পর্ক মজবুত করুন

কঠ উপনিষদ বলে:
“যদা পঞ্চাবতিষ্ঠন্তে জ্ঞানানি মনসা সহ।”
অর্থাৎ, যখন ইন্দ্রিয় ও মন স্থির হয়, তখন শান্তি আসে। পরিবারে সমস্যার সময় ধ্যান অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে। প্রতিদিন পরিবারের সবাই মিলে কিছু সময় ধ্যান করুন। দেখবেন, মনোমালিন্য কমে আসবে এবং সম্পর্ক আরও গভীর হবে।

 ত্যাগের মনোভাব গড়ে তুলুন

উপনিষদ বারবার ত্যাগের গুরুত্বের কথা বলে।
“ত্যাগেনৈকে অমৃতত্বমানশুঃ।”
পরিবারে ছোট ছোট বিষয়ে যদি আমরা ত্যাগ করতে শিখি, তবে বড় ঝামেলা কখনই সৃষ্টি হবে না।

 সত্য ও করুণার চর্চা করুন

ছান্দোগ্য উপনিষদ বলে:
“সত্যং শিবং সুন্দরম।”
সত্য ও করুণা পারিবারিক সম্পর্কের ভিত্তি। যদি আপনি পরিবারের সদস্যদের প্রতি সত্যবাদী হন এবং তাদের প্রতি করুণা দেখান, তাহলে আপনার সম্পর্ক আরও মজবুত হবে।

ভাবনার জন্য কিছু কথা

উপনিষদের শিক্ষাগুলো বাস্তব জীবনে গ্রহণ করা সহজ নয়, তবে একবার আপনি গ্রহণ করতে পারলে দেখবেন, আপনার জীবন ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে। আমি আপনাকে একটি প্রশ্ন রেখে শেষ করতে চাই:
“আপনি কি আজ থেকে আপনার পরিবারের প্রতি ঈশ্বরের অংশ হিসেবে আচরণ করতে শুরু করবেন?”

আপনার উত্তরই আপনার জীবনের দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top