আমরা প্রায়ই জীবনে সুখী দাম্পত্য সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন উপদেশ শুনি। কিন্তু আপনি কি জানেন, আমাদের প্রাচীন উপনিষদগুলোতেও এই বিষয়ে গভীর শিক্ষা রয়েছে? চলুন, আজ আমরা উপনিষদের আলোকে বুঝি কীভাবে বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা একটি সুস্থ ও মজবুত দাম্পত্য সম্পর্কের ভিত্তি হতে পারে।
উপনিষদে দাম্পত্য সম্পর্কের দর্শন
উপনিষদে বলা হয়েছে, “সহ ধর্মাচরণা সুহৃদৌ পতিপত্নী।” অর্থাৎ, স্বামী-স্ত্রী একে অপরের সহযাত্রী, এবং তাদের প্রধান কর্তব্য হল ধর্মাচরণ। এখানে ধর্ম মানে শুধু আচার-বিধি নয়, বরং নৈতিকতা, সততা এবং একে অপরের প্রতি দায়িত্ববোধ।
আমি যদি নিজের জীবনের কথা বলি, বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা না থাকলে যে কোনো সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা কঠিন। আপনি হয়তো দেখেছেন, যেখানে এই দুটি গুণ উপস্থিত, সেই সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং সঙ্গীরা একে অপরের জন্য সুখ ও শান্তির উৎস হয়ে ওঠেন।
বিশ্বাস: সম্পর্কের প্রথম স্তম্ভ
বিশ্বাস ছাড়া কোনো সম্পর্কের ভিত্তি টেকে না। উপনিষদে বলা হয়েছে, “সত্যমেব জয়তে।” সত্যের মধ্যে রয়েছে বিশ্বাসের মূল। আপনি যদি আপনার জীবনসঙ্গীর প্রতি সত্যনিষ্ঠ না হন, তবে সম্পর্ক ক্ষীণ হতে বাধ্য।
একটি উদাহরণ ভাবুন: যদি একজন স্বামী তার স্ত্রীকে তার কাজ বা সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানান না, বা স্ত্রী যদি তার অনুভূতিগুলো গোপন করেন, তাহলে সেই সম্পর্কের ভিত কেমন দুর্বল হয়ে পড়ে। উপনিষদ আমাদের শেখায়, সত্যবাদিতা এবং স্বচ্ছতা সম্পর্ককে দৃঢ় করে। আপনি যখন আপনার সঙ্গীর প্রতি খোলামেলা হন, তখনই বিশ্বাস গড়ে ওঠে।
শ্রদ্ধা: সম্পর্কের দ্বিতীয় স্তম্ভ
শ্রদ্ধা ছাড়া কোনো সম্পর্ক টিকে থাকা সম্ভব নয়। উপনিষদে বলা হয়েছে, “মাতৃদেবো ভব, পিতৃদেবো ভব, পতিদেবো ভব, পত্নীদেবো ভব।” এখানে স্ত্রী ও স্বামীকে দেবতার আসনে বসানো হয়েছে। এর মানে কি? এর মানে, আমরা যদি একে অপরকে শ্রদ্ধার চোখে দেখি, তাহলে সেই সম্পর্ক স্বর্গীয় হয়ে ওঠে।
আমি জানি, কখনো কখনো আমাদের জীবনে এমন পরিস্থিতি আসে যখন আমরা সঙ্গীর প্রতি রাগ বা হতাশা অনুভব করি। কিন্তু এই সময়েও যদি আমরা শ্রদ্ধা বজায় রাখি, সম্পর্ককে নতুনভাবে গড়ে তোলা সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি আপনার সঙ্গীর মতামত গুরুত্ব দিয়ে শোনেন, তা তাদের প্রতি আপনার শ্রদ্ধা প্রকাশ করে।
উপনিষদের ৪টি মূল্যবান উদ্ধৃতি
- “যত্র নার্যস্তু পূজ্যন্তে রমন্তে তত্র দেবতা।” – যেখানে নারীদের সম্মান করা হয়, সেখানে দেবতারা বাস করেন।
- “সত্যং ব্রূয়াত্, প্রিয়ং ব্রূয়াত্।” – সবসময় সত্য বলুন, কিন্তু তা এমনভাবে বলুন যাতে তা প্রিয় হয়।
- “আত্মানং বিদ্ধি।” – প্রথমে নিজেকে জানুন, তারপর অন্যকে বুঝুন।
- “ধর্মো রক্ষতি রক্ষিতঃ।” – আপনি যদি ধর্ম বা ন্যায়ের পথ অবলম্বন করেন, তা আপনাকে রক্ষা করবে।
বাস্তব জীবনের ৩টি উদাহরণ
- স্বচ্ছতা ও বিশ্বাস: একটি দম্পতি নিজেদের দৈনন্দিন কাজের বিষয়ে খোলাখুলি আলোচনা করে। এটি তাদের মধ্যে একটি গভীর বন্ধন তৈরি করে।
- সম্মানজনক মতপার্থক্য: এক স্বামী-স্ত্রী রাজনৈতিক মতাদর্শে ভিন্ন হলেও একে অপরকে শ্রদ্ধা করে। তারা কখনো একে অপরকে অপমান করে না।
- ধৈর্য ও ক্ষমাশীলতা: এক দম্পতি একটি কঠিন আর্থিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছিল। তারা একে অপরের প্রতি ধৈর্যশীল এবং সহায়ক ছিল, যা তাদের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করেছে।
উপনিষদের শিক্ষাকে জীবনে প্রয়োগ করা
আপনি কি আপনার সঙ্গীর প্রতি সত্য ও শ্রদ্ধাশীল হতে চান? তাহলে উপনিষদের এই শিক্ষাগুলোকে মনে রাখুন:
- প্রতিদিন কিছু সময় একে অপরের সাথে কথা বলুন।
- সঙ্গীর অনুভূতিগুলো বুঝতে চেষ্টা করুন।
- কোনো সমস্যা হলে তা নিয়ে আলোচনা করুন, গোপন করবেন না।
- সঙ্গীর সাফল্য এবং প্রচেষ্টাকে স্বীকৃতি দিন।
উপসংহার
উপনিষদ আমাদের শেখায়, বিশ্বাস এবং শ্রদ্ধা হল একটি সফল দাম্পত্য জীবনের প্রধান ভিত্তি। আপনি যদি এই দুটি গুণকে নিজের জীবনে জায়গা দেন, তাহলে আপনার সম্পর্ক স্বর্গীয় হয়ে উঠবে।