আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা প্রায়শই এমন জিনিস ব্যবহার করি যা প্রকৃতি থেকে অনেক দূরে। কিন্তু আপনি কি কখনও ভেবে দেখেছেন, প্রাকৃতিক ও পরিবেশবান্ধব উপকরণের সঙ্গে আপনার জীবনধারাকে জড়িয়ে নিতে পারলে আপনি কতটা আনন্দময়, শান্তিপূর্ণ এবং সুষ্ঠু একটি জীবন যাপন করতে পারেন? উপনিষদ আমাদের শিখিয়েছে যে প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হওয়া মানেই জীবনের সত্যিকারের সারমর্ম উপলব্ধি করা।
প্রকৃতি ও পরিবেশবান্ধব উপকরণের গুরুত্ব
আমি নিজেও যখন এই পথে হাঁটতে শুরু করি, প্রথমেই উপলব্ধি করলাম যে আমাদের জীবনে কত অপ্রয়োজনীয় এবং ক্ষতিকারক উপকরণ ছড়িয়ে আছে। প্লাস্টিক, কৃত্রিম রাসায়নিক, এবং পরিবেশ দূষণকারী জিনিসগুলির ব্যবহার কমিয়ে দিয়ে আমরা নিজেরা যেমন উপকৃত হই, তেমনি প্রকৃতিকেও রক্ষা করি।
উপনিষদে বলা হয়েছে:
“আত্মানং বিদ্ধি” (নিজেকে জানো)।
নিজেকে জানার অন্যতম উপায় হলো প্রকৃতির সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলা। প্রকৃতি আমাদের দেহ, মন, এবং আত্মাকে সুস্থ রাখার শক্তি দেয়। আপনি যখন প্রাকৃতিক উপকরণ ব্যবহার করবেন, তখন এই সংযোগ আরও গভীর হবে।
জীবনের ছোট ছোট ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক উপকরণের ব্যবহার
আপনার জীবনধারায় প্রাকৃতিক উপকরণের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা আমি কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছি।
১. খাদ্য ও পাত্রের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক পছন্দ
আমরা অনেকেই প্লাস্টিকের পাত্রে খাবার রাখি বা খাই। আপনি কি জানেন, এসব পাত্র আপনার শরীরে ক্ষতিকারক রাসায়নিক ঢুকিয়ে দিচ্ছে? কাদা বা মাটির পাত্রে রান্না বা খাওয়ার অভ্যাস করুন। এটা শুধু স্বাস্থ্যকর নয়, বরং পরিবেশবান্ধবও।
উপনিষদে বলা হয়েছে:
“অন্নং ব্রহ্ম” (খাদ্যই ব্রহ্ম)।
যখন আমরা প্রকৃতির কাছ থেকে বিশুদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করি, তখন তা আমাদের আত্মাকে পবিত্র করে।
২. পোশাকের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক তন্তু
আপনারা কি কখনও খেয়াল করেছেন, সিনথেটিক কাপড় পরলে শরীর অসস্তি অনুভব করে? তুলা বা খাদি জাতীয় প্রাকৃতিক তন্তু ব্যবহার করলে শরীর যেমন স্বাচ্ছন্দ্য পায়, তেমনি এগুলো পরিবেশবান্ধবও।
উপনিষদে আমরা পাই:
“সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম” (সবকিছুই ব্রহ্ম)।
প্রতিটি উপাদান, যা প্রকৃতি আমাদের দেয়, তা ব্রহ্মময়।
৩. সৌন্দর্যচর্চায় প্রাকৃতিক উপাদান
আমি নিজে যখন কৃত্রিম প্রসাধনী ত্যাগ করে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার শুরু করি, তখন অনুভব করলাম কতটা স্নিগ্ধতা এবং সতেজতা এসেছে। হলুদ, মুলতানি মাটি, নিমপাতা—এইসব উপাদান আমাদের ত্বকের যত্ন নেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
৪. বাসস্থানে পরিবেশবান্ধব উপকরণ
আপনার ঘর তৈরির উপকরণ বা সাজসজ্জার ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক জিনিস যেমন বাঁশ, কাঠ, এবং পাটের ব্যবহার করলে দেখবেন পরিবেশের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক আরও গভীর হচ্ছে।
উপনিষদের সঙ্গে জীবনের সমন্বয়
উপনিষদের বাণী শুধু তত্ত্ব নয়, জীবনের জন্য একটি পথপ্রদর্শক। এখানে বলা হয়েছে:
“সত্যমেব জয়তে” (সত্যই জয়ী হয়)।
আমরা যদি প্রাকৃতিক উপাদানকে জীবনের সত্যি মনে করি, তবে আমাদের জীবনধারা প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।
আত্মার শান্তি ও পরিবেশের রক্ষা
আমি বিশ্বাস করি, আপনি যদি এই পরিবর্তনগুলি জীবনে নিয়ে আসেন, তবে আত্মার শান্তি খুঁজে পাবেন। প্রাকৃতিক উপকরণ ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করবেন এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর পৃথিবী রেখে যাবেন।
উপসংহার
প্রাকৃতিক ও পরিবেশবান্ধব উপকরণ ব্যবহার করে জীবনধারা বদলে ফেলাটা খুব সহজ। শুধু প্রয়োজন সচেতনতা এবং উদ্যোগ। উপনিষদের এই বাণী দিয়ে শেষ করছি:
“ধন্যম জীবনং” (সার্থক জীবন)।