উপনিষদে দাম্পত্য জীবনে সুখ ও দুঃখের ভূমিকা কীভাবে দেখা হয়?

উপনিষদের গভীর জ্ঞান মানবজীবনের প্রতিটি স্তরে গভীর প্রভাব ফেলে। দাম্পত্য জীবনও এর ব্যতিক্রম নয়। উপনিষদে দাম্পত্য জীবনের সুখ ও দুঃখকে জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে দেখা হয়। আসুন, আমি আপনাকে এই বিষয়ে উপনিষদের শিক্ষার আলোকে একটি ভ্রমণে নিয়ে যাই।

দাম্পত্য জীবন: জীবনের এক অভ্যাসের মঞ্চ

দাম্পত্য জীবন হলো একসঙ্গে জীবনযাপনের একটি প্রশিক্ষণ। এতে সুখ যেমন আছে, তেমন দুঃখও। উপনিষদে বলা হয়েছে, “যথার্থ জীবন সাধনা হলো সুখ ও দুঃখকে সমানভাবে গ্রহণ করা।” এই শিক্ষাটি মনে রেখে, আমি আপনার জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে এই দর্শনকে গ্রহণ করতে বলব। সুখ আমাদের আনন্দিত করে এবং দুঃখ আমাদের শক্তিশালী করে।

উদাহরণস্বরূপ, আমরা যদি বিবাহিত দম্পতি শ্রী রাম ও সীতার জীবনের দিকে তাকাই, তবে দেখতে পাই যে তাদের জীবনে সুখ ও দুঃখের সমন্বয় ছিল। তারা সুখের সময়ে একে অপরকে আরও ভালোভাবে জানার সুযোগ পেয়েছিলেন এবং দুঃখের সময়ে তাদের বন্ধন আরও দৃঢ় হয়েছিল।

সুখ ও দুঃখ: উপনিষদের দৃষ্টিভঙ্গি

উপনিষদে বলা হয়েছে, “সুখ-দুঃখময় এই পৃথিবী হলো ব্রহ্মময়।” অর্থাৎ, আমাদের দাম্পত্য জীবনের প্রতিটি অভিজ্ঞতাই ঈশ্বরের এক অভিনব প্রকাশ। উদাহরণস্বরূপ, আমরা অনেক সময় দেখেছি যে দুঃখজনক ঘটনা আমাদের একে অপরের আরও কাছে নিয়ে আসে। আপনি কি খেয়াল করেছেন, ঝগড়ার পর বোঝাপড়া কেমন সুন্দর হয়? এটাই হলো দাম্পত্য জীবনের সৌন্দর্য।

একটি জটিল সময়ে যখন এক দম্পতি আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হন, তখনই তারা বুঝতে পারেন কীভাবে একে অপরের পাশে দাঁড়ানো যায়। এই অভিজ্ঞতা তাদের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে।

উপনিষদের নির্দেশ: সুখ ও দুঃখের মাঝে ভারসাম্য

উপনিষদে এক সুন্দর শ্লোক পাওয়া যায়:
“যদা পশ্যতি নান্যৎ একো ভবাদীৎ তদা পশ্যতি।”
অর্থাৎ, যখন মানুষ দেখতে পায় যে সমস্ত কিছু একে অপরের সঙ্গে যুক্ত, তখনই সে সত্য দেখতে পায়।

আপনার দাম্পত্য জীবনেও সুখ এবং দুঃখকে আলাদা করে দেখবেন না। এটি একই মুদ্রার দুই পিঠ। যদি সুখের সময় একসঙ্গে হাসতে পারেন, তবে দুঃখের সময় একে অপরের কান্নার সঙ্গী হওয়াও গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, যখন একটি দম্পতি সন্তানলাভের আনন্দ পায়, তখন তারা পরস্পরের মধ্যে ঈশ্বরের এক অভিব্যক্তি দেখতে পায়। আবার, সন্তান বড় করার দুঃখের মধ্যেও তারা জীবনের গভীর শিক্ষার সন্ধান পায়।

দাম্পত্য জীবনে উপনিষদের ৪টি মূল শিক্ষা

  •  সহনশীলতা:
    উপনিষদে বলা হয়েছে, “তিতীক্ষা হি পরমম ধনম।” অর্থাৎ, সহ্য করার ক্ষমতাই হলো আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ। আপনি কি খেয়াল করেছেন, সহনশীলতা দাম্পত্য জীবনের প্রতিটি সমস্যা সহজ করে তোলে?
  •  সম্পর্কে দানশীলতা:
    আপনার সঙ্গীর জন্য আপনি কীভাবে ত্যাগ করছেন, সেটি গুরুত্বপূর্ণ। উপনিষদ বলে, “যজ্ঞার্থং তপঃ করোতি।” অর্থাৎ, যজ্ঞ বা ত্যাগ আমাদের জীবনের সৌন্দর্য বাড়ায়।
  •  দৃঢ় বিশ্বাস:
    উপনিষদে উল্লেখ রয়েছে, “শ্রদ্ধাবান লভতে জ্ঞানম।” দাম্পত্য জীবনে যদি একে অপরের প্রতি বিশ্বাস থাকে, তবে কোনো সমস্যাই দীর্ঘস্থায়ী হয় না।
  • আত্মজ্ঞান:
    উপনিষদে বলা হয়েছে, “আত্মানং বিদ্ধি।” অর্থাৎ, আগে নিজেকে জানুন। নিজের অনুভূতিগুলো বোঝার চেষ্টা করুন এবং তারপর সঙ্গীর অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করুন।

উপনিষদের দৃষ্টিতে দাম্পত্য সুখের উদাহরণ

আমি আপনাকে একটি গল্প বলি। উপনিষদে উল্লেখিত একটি দম্পতির গল্প হলো নচিকেতা ও তার পিতা। যদিও এটি সরাসরি দাম্পত্য জীবনের গল্প নয়, তবে এর শিক্ষা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। যখন নচিকেতা তার পিতার সিদ্ধান্তে দ্বন্দ্বে পড়ে, তখন সে ধৈর্য ও নম্রতার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান খুঁজে পায়। এই একই ধৈর্য ও নম্রতা দাম্পত্য জীবনেও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

আরেকটি উদাহরণ হলো সত্যবতী ও শান্তনুর সম্পর্ক। তাদের ভালোবাসা ও একে অপরের প্রতি বিশ্বাস দাম্পত্য জীবনের একটি আদর্শ উদাহরণ।

চূড়ান্ত ভাবনা: জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে গ্রহণ করুন

দাম্পত্য জীবনে সুখ ও দুঃখের ভূমিকা উপনিষদে খুব সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এটি আমাদের শেখায় যে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কি কখনো ভেবেছেন, কেন দুঃখ ছাড়া সুখের মূল্য নেই? “জীবন একটি যাত্রা, যেখানে সুখ ও দুঃখ মিলে আমাদের পূর্ণতা দেয়।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top