অন্য ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রতি সহনশীলতা নিয়ে কোনো কথা বলা হয়েছে?

অন্য ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রতি সহনশীলতা নিয়ে কোনো কথা বলা হয়েছে?

আমাদের সনাতন ধর্মের অন্যতম সৌন্দর্য হলো এর উদারতা। এই ধর্ম শুধু নিজের পথ অনুসরণ করতেই শেখায় না, বরং অন্যদের পথকে সম্মান করতেও নির্দেশ করে। উপনিষদ আমাদের এই সহিষ্ণুতা এবং সকলের প্রতি ভালোবাসার পাঠ পড়ায়। আসুন দেখি, উপনিষদ কীভাবে এই সহনশীলতার ধারণা গড়ে তোলে এবং আমাদের জীবনে এর প্রাসঙ্গিকতা কী।

সহনশীলতার মূল ভিত্তি: উপনিষদের দৃষ্টিভঙ্গি

উপনিষদে বারবার বলা হয়েছে যে “একং সদ্বিপ্রা বহুধা বদন্তি”। অর্থাৎ, সত্য একটিই, কিন্তু জ্ঞানীরা তাকে বিভিন্ন নামে ডাকেন। এই বক্তব্য আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, ধর্মের মূল উদ্দেশ্য একটাই—পরমাত্মার সাথে সংযোগ স্থাপন। যার যার পদ্ধতি আলাদা হতে পারে, কিন্তু উদ্দেশ্য সব সময় একই।

সনাতন ধর্ম কখনও অন্যদের পথকে নিন্দা করে না। বরং বলেছে, “তুমি তোমার পথে এগিয়ে চলো, অন্যের পথেও সম্মান দাও।” এই দর্শন অন্য ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রতি সহনশীল হওয়ার শিক্ষা দেয়।

ভগবান কৃষ্ণের উদাহরণ: সহনশীলতার মূর্ত রূপ

ভগবদ গীতায় ভগবান কৃষ্ণ বলেছেন, “যো যো যাং যাং তনুম্ভক্তঃ শ্রদ্ধয়াৰ্চিতুমিচ্ছতি। তস্য তস্যাচলাং শ্ৰদ্ধাং তামেব বিদধাম্যহম্।” অর্থাৎ, যে যেভাবে আমার উপাসনা করে, আমি সেইভাবে তার উপাসনাকে গ্রহণ করি। এই শ্লোকটি আমাদের শিক্ষা দেয় যে, ঈশ্বরের কাছে পৌঁছানোর কোনো নির্দিষ্ট পথ নেই। প্রত্যেকের নিজস্ব উপায়ে ঈশ্বরকে পাওয়ার অধিকার রয়েছে।

রামের রাজ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি

রামায়ণেও আমরা সহিষ্ণুতার এক অনন্য উদাহরণ পাই। রাম যখন অযোধ্যার রাজা হলেন, তখন তিনি সব ধর্মের মানুষকে সমানভাবে গ্রহণ করেছিলেন। অযোধ্যার প্রজারা বিভিন্ন দেব-দেবীর উপাসনা করলেও, রাম কখনও তাদের উপাসনা পদ্ধতিকে প্রশ্ন করেননি। বরং তিনি সকলের সুখ-শান্তি নিশ্চিত করেছিলেন।

সহিষ্ণুতা কেন প্রয়োজন?

সহিষ্ণুতা আমাদের জীবনে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির মানুষ একত্রে বসবাস করতে গেলে পারস্পরিক সম্মান অপরিহার্য। আমাদের সনাতন ধর্মে এই বিষয়টি শুরু থেকেই গুরুত্ব পেয়েছে।

উপনিষদ বলেছে, “বসুধৈব কুটুম্বকম্”, অর্থাৎ, এই পৃথিবী একটি পরিবার। আমরা সবাই এক পরিবারের সদস্য। তাই আমাদের উচিত অন্যদের ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রতি সহনশীল থাকা এবং তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া।

সহিষ্ণুতা জীবনে প্রয়োগের উপায়

  • শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা: অন্যের বিশ্বাসকে সম্মান করতে হবে এবং তাদের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করতে হবে।
  • পরিচালনার উদারতা: সমাজে এমন ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে, যেখানে সবাই সমান অধিকার এবং স্বাধীনতা পায়।
  • জ্ঞান লাভ: অন্য ধর্ম ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করলে আমাদের মধ্যে সহনশীলতা বৃদ্ধি পায়।

সহিষ্ণুতা ও সনাতন ধর্মের শাশ্বত বার্তা

আমাদের সনাতন ধর্ম এক অপার জ্ঞানসমুদ্র। এর প্রতিটি অধ্যায় আমাদের শান্তি, প্রেম এবং সহিষ্ণুতার কথা বলে। তাই আসুন আমরা এই মহান শিক্ষাকে গ্রহণ করি এবং আমাদের সমাজে সহিষ্ণুতার আলো ছড়াই। কারণ, সহিষ্ণুতা শুধু আমাদের ব্যক্তিগত উন্নতি নয়, বরং সমগ্র মানবতার কল্যাণ নিশ্চিত করে।

হরিওম তৎসৎ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top